অভয়নগরে চাঞ্চল্যকর প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক ‘লিমন’ হত্যাকান্ডে রুজুকৃত ক্লুলেস মামলার মূল রহস্য উদঘাটন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মামলার প্রেক্ষাপট: শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি ও অসুস্থ্য ভিকটিম লিমন শেখ (২৬) প্রতিদিনের ন্যায় গত ১১/০৮/২০২৫ খ্রি. রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় নয়াপাড়া শহরে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে (নওয়াপাড়া জগবাবুর মোড় এলাকার জনৈক আঃ রহিম আকুঞ্জির ভাড়া বাড়ি) রাতে আর বাড়ীতে ফিরে আসেনি।
পরের দিন ১২/০৮/২০২৫ খ্রি. সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকায় অভয়নগর থানাধীন ৫নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামস্থ ফরাজীপাড়া বিলপাড়াগামী কাঁচা রাস্তার পাশে জনৈক নাসির ফরাজীর পতিত জমিতে জিকে গাছের সাথে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ গলায় কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় পড়ে আছে মর্মে স্থানীয় সূত্রে সংবাদ পায় অভয়নগর থানা পুলিশ।
উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে নিকটস্থ পাথালিয়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে অফিসার ও ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উক্ত ঘটনার সংবাদ পেয়ে অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় ভিকটিম লিমনের বাবা আবুল কাশেম শেখ ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার বড় ছেলে (লিমন শেখ) এর মৃতদেহ সনাক্ত করেন।
পরবর্তীতে থানা পুলিশ ভিকটিম লিমনের মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, যশোর মর্গে প্রেরণ করে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় ১১/০৮/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০টা হতে ইং ১২/০৮/২০২৫ তারিখ ভোর অনুমান ০৫.০০ টার মধ্যে যে কোন সময়ে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে একই উদ্দেশ্যে লিমন শেখ এর ভ্যানটি ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করে অভয়নগর থানাধীন ৫নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামস্থ ফরাজীপাড়া-বিলপাড়াগামী কাঁচা রাস্তার নির্জন স্থানে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জনৈক নাসির ফরাজীর পতিত জমিতে জিকে গাছের সাথে গলায় কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখে তার ব্যাটারী চালিত ভ্যান (যার মুল্য অনুমান ৮০,০০০/-টাকা) এবং তার ব্যবহৃত বাটন মোবাইল ফোন (যার সিম নং-০১৯৯১-২০৬৬৭১, যার মূল্য অনুমান ১১০০/- টাকা) নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে ভিকটিম লিমনের বাবা আবুল কাশেম শেখ অভয়নগর থানায় উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করলে অভয়নগর খানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ: ১৩ আগস্ট, ২০২৫,জিআর নং-১৫৫, তারিখ- ১৩ আগস্ট, ২০২৫: সময়- রাত্র ০০.১০ ঘটিকা ধারা- ৩৭৯/৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয় এবং এসআই (নিঃ) মোঃ বায়েজীদ মোল্লা’কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
মামলার তদন্ত কার্যক্রম: চাঞ্চল্যকর লিমন হত্যা মামলার মূলরহস্য উদঘাটন, প্রকৃত আসামী গ্রেফতার এবং ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারে একটি বিশেষ টিম নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তায় ২০/০৮/২৫ খ্রি. সময় অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকায় সন্দিগ্ধ হিসেবে *মোঃ বিল্লাল হোসেন (২৭), পিতা-মোঃ তারিকুল ইসলাম,সাং-শংকরপাশা,থানা:অভয়নগর,জেলা-যশোরকে* নওয়াপাড়া শিল্প শহরের নুরবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে (বিল্লাল) উক্ত ঘটনায় ভিকটিম লিমন এর প্র্যান ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে ভাড়া করে নির্জন স্থানে (উপরে বর্ণিত) নিয়ে গিয়ে একাই ভিকটিমের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মৃতদেহ গলায় কাপড় দিয়ে জিকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে,তার নিজ বাড়ির ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা ভ্যানের বডি, চাকা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ খোলা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অভয়নগর থানা ও ফুলতলা থানায় (খুলনা) পৃথক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিক্রিকৃত ভ্যানের ০৪ (চারটি) ব্যাটারি লিটন, আসানুর ও সঞ্জয় নামীয় ০৩ (তিন) জন ব্যক্তির হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় এবং চোরাই ব্যাটারি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকায় উক্ত ০৩ (তিন) জনকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ ভিকটিম লিমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আসামী বিল্লাল বন্ধ করে পথিমধ্যে অজ্ঞাতস্থানে ফেলে দিয়েছে মর্মে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়,ফলে উক্ত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।