আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
চিপ রিপোর্টার:ঢাকা (১২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি.):
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নিরাপদ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণসহ একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাতে কোন আইন বহির্ভূত কাজ না করে সে বিষয়েও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, বিগত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের আসন্ন নির্বাচনে যথাসম্ভব দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হবে। আপনারা জানেন, এ প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ২৮টি ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ সারাদেশে (জেলা, মহানগর ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) ১৩০ টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য পুলিশের চূড়ান্ত (৪র্থ পর্যাযের) প্রশিক্ষণ গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে সকল ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আনসার ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ শিরোনামে প্রতি কেন্দ্রে ১৩ জন হারে আনুমানিক ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তন্মধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ ও ৪ লক্ষ ৫০ হাজার জনকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ প্রশিক্ষণ শেষ হবে। উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে বিজিবির ১১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ইতোমধ্যে ৬০% নির্বাচনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিজিবি’র প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, কে কি চায় সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়৷ আমার ছেলে মেয়ে সবাই দেশে৷ আমি একা সেফ এক্সিট নিয়ে কি করব? অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর হেফাজতে রেখে বিচারকার্য করার বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।