নিজস্ব প্রতিবেদক:
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার কেরানী পাড়ায় ডিবি পুলিশ ১ কেজি গাঁজাসহ সোর্স কে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে গাঁজা উদ্ধার করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের সাথে রাখাইনদের বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় পুরো পাড়া জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পরে।
রাখাইনদের কিল ঘুষি, লাথিসহ মারধরের অভিযোগ এনে ২০-২৫ জন রাখাইন নারী পুরুষ জরো হয়ে ডিবি পুলিশকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেন। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ পরিত্যাক্ত মাদকের রহস্য উন্মোচনে সোর্স আজিজকে আটক করে নিয়ে যায়। ডিবি পুলিশের দাবী মাদক ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সোর্সের মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষ কে ফাঁসানোর জন্য মাদক আনা হয়। এর সাথে দুই সোর্স জড়িত।
ডিবি পুলিশ জানান, সোর্স হুমায়ুন ও আজিজুল এর তথ্যমতে ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) সন্ধায় কুয়াকাটার কেরানী পাড়ায় মাদক উদ্ধার অভিযানে যান পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের একটি দল। এ সময় কেরানী পাড়ার পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী হেমাতি ও মাওয়েন মগনীর দুই ঘারের মাঝ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১ কেজি পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
এ গাঁজা উদ্ধার নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী দুই পক্ষ একে অপরকে ফাঁসানোর অভিযোগ করে। এসময় ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা খেয়ে পক্ষ পাতিত্বের অভিযোগ তোলে এক পক্ষ। রাখাইনদের দাবী ডিবি পুলিশ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে। অভিযানকালে জানতে চাইলে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে ডিবি পুলিশ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন।
ডিবি পুলিশের এস আই সম্মিত রায় বলেন, আমরা দুই মাদক কারবারির ঘরের সামনে উপস্থিতি। তখন ঘরের পিছনে শব্দ হয়। গিয়ে দেখি দুই ঘরের ফাঁকায় পলিথিনে মোড়ানো গাঁজার একটি মোচা পরে আছে। অন্যদিকে ডিবির অপর একজন দাবী করেন তাদের সামনেই মাওয়েন এর দোতালার জালানা থেকেই তিনজন রাখাইন মেয়ে নিচে ফেলে দেয়।
তার দাবি মাদক কারবারি হেমাতিকে ফাঁসাতে এমন কাজ করা হয়েছে। দুই জনের বক্তব্য দুই রকম।কেরানি পাড়ার মহিলা নেত্রী লুমা রাখাইনসহ পাড়ার মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের কয়েকজন শুক্রবার রাতে ডিবি পুলিশের সামনে এবং প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান,
ডিবি পুলিশ টাকার বিনিময়ে মুল অপরাধী হেমাতিকে ছেড়ে দিয়ে পরিত্যক্ত মাদক উদ্ধারের নাটক করেছে। এর প্রতিবাদ করলে রাখাইন নারীদের মারধর করা হয় বলে দাবী করেন তারা। তবে ডিবি পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে হেমাতির দাবী তাকে ফাঁসাতে মাদক রাখা হয়েছে।
থানা পুলিশের তথ্যমতে, হেমাতি ও মাওয়েন কে নিজস্ব তৈরী বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ এবং গাঁজাসহ একাধিক বার গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলও খেটেছে। গত ১১ অক্টোবর মাওয়েন মগনী প্লাস্টিকের কলস ভর্তি গাঁজাসহ মহিপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেরানী পাড়ার কয়েকজন নিরিহ রাখাইন জানান, কেরানী পাড়া মাদকের আখড়া হিসেবে স্বীকৃিত। মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে একই পরিবারের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আপন দুই জাঁলের মধ্যে প্রায়ই জগড়া বিবাদ লেগেই থাকে।
একজন অপরজনকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিচ্ছে। তাদের দাবি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক, ডিবি এবং পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতায় মাদক ব্যবসা করে আসছিল এরা। অভিযোগ রয়েছে ডিবি পুলিশ মহিপুর থানা এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন রাখাইন পাড়ায় তৈরি চোলাই মদ তৈরী এবং বিক্রির জন্য মাসোহারা নিয়ে থাকেন। মদ আটকের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে।
জেলা ডিবি পুলিশের এসআই সম্মিত রায় বলেন, সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কুয়াকাটা কেরানি পাড়ার একটি বাড়িতে তল্লাশি করি, তল্লাশিতে সেখানে কোনো মাদক না পেয়ে চলে আসার সময় সোর্সের দেখানো মতে হেমাতি ও তার দেবরের দুই ঘরের মাঝখান থেকে কালো কস্টিপে মোড়ানো ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করি।
তিনি আরও বলেন, সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক আজিজ নামের সেই সোর্সকে আটক করি। আজিজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পটুয়াখালী ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসি প্রাথমিকভাবে সে গাজা সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, পটুয়াখালী ডিবির অফিসার ইনচার্জ আজমুল হুদা বলেন, ডিবির মাদকবিরোধী অভিযানে ১ কেজি গাজা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এর সাথে জরিত থাকার অভিযোগে সোর্স আজিজ কে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গাঁজাসহ সোর্সকে মহিপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ ফেরদৌস আলম খান জানান, ডিবি গাজা সহ ১জনকে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তার নামে রীতিমত মামলা হয়েছে।