পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক লেনদেনের জেরে হত্যাকাণ্ড: লাশ ২৬ টুকরা, ডিবির অভিযানে মূল আসামি গ্রেফতার
সৈয়দ ওবায়দুর রহমান,ঢাকা, ১৫ নভেম্বর ২০২৫:
রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে দুটি ড্রামে ছাব্বিশ টুকরা খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল আসামি মোহাম্মদ জরেজুল ইসলাম (৩৯) গ্রেফতার হয়েছে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে।
ঘটনার শুরু ডিবি সূত্রে জানা যায়, নিহত আশরাফুল হক (৪৪) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ–রসুন ব্যবসায়ী। ১১ নভেম্বর রাতে তিনি বন্ধু জরেজুলকে নিয়ে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকেই আশরাফুল ফোনে আর পাওয়া যাচ্ছিল না।
১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগ থানা পুলিশ জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশ থেকে দুটি ড্রামে ভরা খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হয়। পরে আশরাফুলের বোন মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন ও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ডিবির তদন্ত ও গ্রেফতার
ঘটনার পর ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে ১৪ নভেম্বর রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে জরেজুলকে গ্রেফতার করা হয়।
তার দেখানো মতে সায়দাবাদ এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাপাতি এবং ভাড়া বাসা থেকে স্কচটেপ ও হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।
পরকীয়ার জেরে দ্বন্দ্ব
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুল ইসলাম দেশে ফেরার দেড় মাস আগে “বিগো লাইভ” অ্যাপে কুমিল্লার শামীমা ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি জানার পর জরেজুলের স্ত্রী পারিবারিক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
স্ত্রী ঘটনাটি জানতে পেরে সমাধানের জন্য জরেজুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে আশরাফুল বন্ধুকে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৪ লাখ টাকা দাবি করেন; যার মধ্যে শামীমার দেওয়ার কথা ছিল ৭ লাখ টাকা। এই আর্থিক লেনদেন ও শামীমার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে দুই বন্ধু ঢাকায় আসেন।
ভাড়া বাসায় ঘটে যায় হত্যাকাণ্ড ১৪ নভেম্বরের আগেই তিনজন ডেমরার ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে ওঠেন। বাসায় প্রয়োজনীয় আসবাব কেনার পর তারা শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় আশরাফুল শামীমাকে অস্বাভাবিক পথে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করতে চাইলে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। শামীমার কান্নাকাটিতে ক্ষিপ্ত জরেজুল বন্ধুর ওপরে আক্রমণ চালান।
পরিকল্পিত কৌশলে শামীমা আশরাফুলের হাত বেঁধে ফেললে জরেজুল হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। মুখ স্কচটেপ ও ওড়না দিয়ে বেঁধে দেওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই আশরাফুল মারা যান।
লাশ টুকরা ও গুমের চেষ্টা ১২ নভেম্বর রাতভর লাশ রেখে পরদিন সকালে তারা বাজার থেকে দুটি প্লাস্টিক ড্রাম, পলিথিন ও একটি চাপাতি কিনে আনে। বাথরুমে পানির ট্যাপ খুলে জরেজুল লাশ কেটে ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে। পরে একটি সিএনজি ভাড়া করে হাইকোর্ট সংলগ্ন ফুটপাথে ড্রাম দুইটি রেখে পালিয়ে যায় তারা।
শামীমা কুমিল্লায় এবং জরেজুল রংপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও পরে জরেজুল কুমিল্লায় এক বন্ধুর বাসায় লুকাতে যায়। সেখান থেকেই ডিবি তাকে গ্রেফতার করে।
চলমান তদন্ত চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ডিবি।







