বাঘারপাড়ার একজন সাদেক আলীর বিচিত্র জীবন সংগ্রাম
বাঘারপাড়া প্রতিনিধিঃ
বৃহত্তর যশোর যখন চার সাবডিভিশন নিয়ে গঠিত ছিলো তখন অর্থাৎ ষাটের দশকের শুরু থেকে দেখছি আজও সাদেক চাচা মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে। তিনি কোনো দর্শনীয় অবদান রেখে যাননি। যা রেখে গেছেন বর্তমান সমাজের লোকদের হয়ত একটু কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তিনি সমাজের দুস্চরিত্র, অসৎ, দুর্বৃত্ত, প্রতারক ও অসাধু ব্যাক্তিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন একটা জীবন চলতে বেশি কিছু লাগে না। তিনি কোন অসাধারণ মানুষ নয় তিনি একজন সাদাশিদে সাধারণ জীবন জাপানকারি মানুষ।
এলাকার সর্বজন প্রিয় কারও কাছে সাদেক ভাই, কারও কাছে সাদেক চাচা, কারও কাছে সাদেক দাদা নামে পরিচিত ছিলেন। অভাবের তাড়নায় জীবন যুদ্ধে বাদর নাচন থেকে শুরু করে, বাইচকোপ, মাছ বিক্রি, আইচক্রিম বিক্রি, কাচা ফলফলাদি ক্রয় বিক্রয় করে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন এই মানুষটি।
আজও তার বিরুদ্ধে কোনো মানুষের কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। সাদেক চাচা উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের ভিটাবল্লা গ্রামের এক অতি দরিদ্র মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি তারজীবদ্দশায় কাহারো সংগে কোন সংঘাতে জড়াননি। যতদিন তিনি বেচে ছিলেন সৎ পথে থেকে সৎ পয়সা উপার্জন করে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন।
এগুলো ছিল তার জীবনের অন্যতম মহৎ গুন। এব্যাপারে সরেজমিনে গিয়া জানা যায় সাদেক চাচার বিরুদ্ধে তার প্রতিবেশীদের কোন অভিযোগ নেই। কথা হয় ভিটাবল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাঘারপাড়া উপজেলা হাজী কল্যান পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন হাজী কল্যান পরিষদের সম্মানিত সহসভাপতি আলহাজ্ব
মোঃ আঃ মজিদ আনোয়ার তিনি বল্লেন সাদেক মিয়া সমাজের দর্শনস্বরুপ। সাদেক মিয়ার নিকটে যদি পাঁচ টাকা থাকতো তিনি বাজারে এসে ঐ পাঁচ টাকার কেনাকাটা করত। অতিরিক্ত এক পয়সারও বেশি কেনাকাটা করতেন না। তার নিকট কেউ কোনো টাকা পয়সা পাবে এমন লোক
এলাকার ১৯ গ্রামের মধ্যে এখনও খুজে পাওয়া যায়নি। পক্ষান্তরে তিনি তিনার শেষ জীবনে মালয় ভরফ(আইস্ক্রিম) বিক্রি করে মৃত্যু বরন করেন। একআনা, দুআনা, চারআনা হিসেবে আইসক্রিম বিক্রি করতেন সেই সুবাদে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মালয়ভরফ বিক্রিকরতেন। অনেক সময় বিনামূল্যে দিতেন অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষদের।
তিনি কোন এক মাজহাবের বা তরিকার ভক্ত তাই তিনি জীবিতবস্তায় কোনদিন পায়ে জুতা পরেননি। তিনার ধারনা ছিল এই জমিনে অনেক পীর ও অলিআওলা ঘুমিয়ে আছে তাই তিনি জুতা পায়ে দিতেন না। মৃত্যুর আগে পরিবারের লোকজনদের একটা উপদেশমূলক বানী দিতেন তোমরা সৎ পথে থেকে সৎ উপার্জন করবে তাই সাদেক চাচা মানুষ্য সমাজের জলন্ত উদাহরণ।
অনেকেই বললেন সাদেক মিয়া কখনও কাহারও নিকট হাত পাতেনি এটা তার জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। জুটতে পারলে খেত না পারলে সেদিন অনাহারে থাকতো তবুও কাহারও নিকট হাত সম্প্রসারিত করতেন না। এটা ছিল তার জীবনের প্রধান মূলমন্ত্র। এই হিসেবে সাদেক চাচা তার এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয়।