ভোলায় ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে দখল-দূষণে খরস্রোতা খালটি
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি দখল ও দুষণে দিন দিন ড্রেনে পরিণত হচ্ছে। এক সময়ের খরস্রোতা এ খালটি এখন পৌর শহরের মানুষের ময়লার ভাগাড়। এর আগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পানি
উন্নয়ন বোর্ড এ খাল রক্ষায় চেষ্টা চালালেও তেমন কোনো কাজ হয়নি। ফলে দিন দিন খালটি তার অস্তিত্ব হারিয়ে সরু নালায় রূপ নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে খালটি পুনরুদ্ধারে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত এই খালটি খননসহ দখল মুক্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার সর্বদক্ষিণের চরফ্যাশন পৌর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি মানদাতলির খাল হয়ে বেতুয়া নদী ও মেঘনা নদীর সাথে যুক্ত। এক সময় এ খাল দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বাজার ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো।
এমনকি এ খাল দিয়ে জেলার দৌলতখান, মুন্সির হাট, বোরহানউদ্দিন, কচ্ছপিয়া ও মনপুরাসহ বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল করতো। চরফ্যাশন বাজার থেকে বেতুয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী ছোট ছোট লঞ্চও চলাচল করতো।
কিন্তু অবৈধ দখল ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এখন আর এ খালটিতে জোয়ার-ভাটার পানি আসে না। স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাদাতসহ ১০-১২ জন বাসিন্দা জানান, চরফ্যাশনের উত্তর মাথার লঞ্চঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রলার চরফ্যাশনের আছলামপুর ইউনিয়নের বেতুয়া ও
লালমোহনের লডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী ১৬ কপাট স্লুইজ গেট পর্যন্ত চলাচল করতো। তারা এ রুটে নিয়মিত মাদরাসায় আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু এখন এ খাল দিয়ে একটি ডিঙি নৌকাও চলাচলের পরিস্থিতি নেই। এলাকাবাসী জানান,
বাজারে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে এই খালের পানি দিয়েই আগে আগুন নেভানো হতো। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব নয়। শহরবাসীর কাছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। খালে এখন আর আগের মতো জোয়ার-ভাটার পানি আসে না। বাজারের আগুন লাগলে খাল থেকে পানি পাওয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালের পানি প্রবেশমুখ বন্ধ করে দিয়েছে। খালের পাশে মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে।
দুই পাশ থেকে প্রভাবশালীরা দখল করায় খালটি এখন সরু নালায় পরিণত হয়েছে। এখন ভরাট ও দখলে অস্তিত্ব হারিয়ে খালটি শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে রয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এ খালটি পূর্বে বেতুয়া নদী থেকে শুরু হয়ে চরফ্যাশন বাজার হয়ে পশ্চিমে মায়া নদী হয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ রুটের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলামিটার। এর সাথে আরো শাখা খাল রয়েছে। বর্তমানে এই খালটি বাজার এলাকায় প্রস্থ ২০ থেকে ২৫ ফুট।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, আগে এর প্রস্থ তিন গুণ বেশি ছিল। চরফ্যাশন পৌরসভার কাউন্সিলর আকতারুল আলম (সামু) জানান, চরফ্যাশন বাজারের মানদাতলির খাল পৌরসভার প্রাণ। এক সময় এটি দিয়ে নৌকা চলাচল করতো।
খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র এই খালটি উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এখনো পুরপুরি নাব্যতা ফিরে আসেনি। নাব্যতা ফিরে না আসলে মশা-মাছির উপদ্রপসহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তাই খালটি খনন করে পুনরুদ্ধারের দাবি জানান তিনি।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহামুদ জানান, এ খালটির অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে ইতোপূর্বে উচ্ছেদ করা হয়। এ খালটির দুধু মিয়ার ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে মানদারতলি পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, কালিবাড়ির
মন্দির থেকে কাজি মঞ্জুরদের বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ও থানার সামনে থেকে কতুবগঞ্জ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারসহ মোট ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এমনকি ২০১৯ সালে খালটির দখল উচ্ছেদ করা হয়।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার জানান, ৬৪ জেলার খাল খনন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে চরফ্যাশন উপজেলার বাজারের খালটির ১০ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়। এখন সেই খালটির বাজার
অংশের তিন কিলোমিটার এলাকা ভরাট হয়ে গেছে। খালটি নতুন করে খননের জন্য পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।