লালমনিরহাট কুলাঘাট ইউনিয়নে একটি সেতুই বদলে দিতে পারে ২০ হাজার মানুষের ভাগ্য।
মাটি মামুন, সত্যকন্ঠ:
উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা অত্যান্ত ক্ষোভোর সাথে বলেন, এই বাশেঁর সাকোর উপর দিয়ে যেতে যেতে স্কুল জীবনই শেষ হতে চললো এতোদিনেও
এখানে একটি সেতু নির্মান হলো না।
তাকে সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে লালমনিরহাট শহরে যেতে হচ্ছে পরীক্ষা দিতে।আমার মতো আরো অনেক শিক্ষার্থী এই সাকোর উপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়।
অথচ এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এই এলাকার ২০ হাজার মানুষ উপকৃত হতো। কুলাঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়াডের
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট।
জেলাটির চারিদিকে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান,সতী, রত্নাইনদীসহ কয়েকটি নদী দিয়ে জেলাটি ঘেরা। এ যেন নদীর মাঝে জেগে ওঠা এক খন্ড চর। সরকারী অনেক সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় এই জেলার মানুষ বরাবরেই অবহেলিত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুঠি এলাকার ছোট্ট একটি নদী রত্নাই নদী। এই নদী পারাপারের ঘাটের নাম হচ্ছে সরেয়ারতলের ঘাট।
বর্তমানে এখানে একটি বাশেঁর সাকোর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। নদীর ওই পাড়ে ৪টি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের দির্ঘদিনের দাবি
সরেয়ারতলের ঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মিত হলে বদলে যাবে এই ৪ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের ভাগ্য। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত একটি জনপদ। এই ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের এই জনপদ চরাঞ্চল নামে অধিক পরিচিত।
শুধু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে মাত্র ৩কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষি ওমাছে সমৃদ্ধ ওই এলাকাটি অনেক পিছিয়ে। এই ৪ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা তাহলো- সরেয়ারতলের ঘাট’।
এই রাস্তা দিয়েই ওই এলাকার লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাশেঁর সাকোর উপর দিয়ে ঘাট পার হয়ে শহরে প্রবেশ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে সময় মতো পৌঁছতে পারে না।
অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এই ধরলা নদীর চরে গড়ে উঠতে পারে ভাল একটি পর্যটন কেন্দ্র। সেই সাথে কৃষিতে আসবে আরও সমৃদ্ধি। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়
না। নদী পার হয়ে দূরের স্কুলে গিয়ে শিশুরা লেখাপড়া করে। এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি, দক্ষিণ শিবেরকুটি, বনগ্রাম গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।এই একটি সেতু নির্মাণ হলে এই জনপদ অনেক এগিয়ে যাবে।
অতএব, শিবেরকুটিন‘সরেয়ারতলের ঘাট’ এ ছোট রত্নাই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ওই ৪গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।
শিবেরকুটি গ্রামের বাসিন্দা ও কোদালখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদক কে বলেন, রত্নাই নদীর সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাই। ২০১০ সালে বর্ষাকালে
নৌকায় পার হওয়ার সময়ে নদীতে মোটর সাইকেলসহ পড়ে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করেছিলেন। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ওই দিনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি।
কবে যে সরেয়ারতল ঘাটে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে? একই এলাকার বাসিন্দা 8 পশ্চিম বড়ুয়া রোটারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বলেন, শিক্ষকতার কাজে অনেক সময় লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিস, বিভাগীয় শহর রংপুর ও
রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। যেখানেই যাই না কেন রাস্তা বা সড়ক ওই একটাই।
আমার গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হলেও এই রত্নাই নদীর সরেয়ারতল ঘাট পাড় হয়ে তবেই যেতে হয়। তিনি আরও
বলেন ওই বাশেঁর সাকোর উপর দিয়ে পাড়
হতে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়।
এত উন্নয়নের গল্প শুনি। সরেয়ারতল ঘাটের সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই তো দেখি না। একই এলাকার কুলাঘাট মুকুল বলেন, আমাদের এলাকাটি রত্নাই নদী
দ্বারা বিচ্ছিন্ন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার
কারণে এ এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষের কাঙ্খিত জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে না। আর্থ- সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, সহজে শিক্ষা-চিকিৎসা ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারছে না। এজন্য দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রীস আলী জানান, উপজেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সেতু নির্মাণের কথা একাধিকবার উপস্থাপন করা হলেও কোন অদৃশ্য কারণে সেখানে সেতু নির্মাণের কোন পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
ফলে শিবেরকুটিবাসীকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মঞ্জুর কাদের ইসলাম বলেন, আমার এ জেলায় আসার বেশিদিন হয়নি। তারপরেও ওই এলাকার ২০ হাজার মানুষের দির্ঘদিনের কষ্টের কথা শুনে শিবেরকুটিতে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।