সৈয়দপুরে বসতভিটা কেড়ে নিতে সংঘবদ্ধ চক্রের হামলা মামলায় বিপর্যস্ত একটি অসহায় দরিদ্র পরিবার
নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
অর্থ, সম্পদ, সন্তান, জনবল, প্রভাব প্রতিপত্তিহীন এক দরিদ্র বৃদ্ধের শেষ সম্বল কেড়ে নিতে তৎপর একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নানামুখী চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে চরম বিপর্যস্ত করে তুলেছে জীবন। তাতেও পৈত্রিক ১১ শতক জমি হাতাতে না পেরে হামলা করে মেয়ের শ্লীলতাহানীর চেষ্টাসহ বাড়িঘর ভাঙ্চুর ও মারধর করেছে এবং মিথ্যে মামলায় জড়িয়েছে ভূমিদস্যুরা।
প্রভাবশালী ও প্রতিপত্তির মালিক ওই চক্রের অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও পাশে দাঁড়ায়নি জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিবেকবান কেউ। একের পর এক চাপ, জোর করে জায়গা দখল করা, প্রাণনাশের হুমকি এবং সর্বশেষ হামলা ও মামলা করে উচ্ছেদের অপচেষ্টায় কোন সুরাহা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অসহায় পরিবারটি।
জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল পানাতিপাড়ার বৃদ্ধ জামাল উদ্দীন (৮২) পৈত্রিক সূত্রে বসতভিটায় ৩৩ শতক জমি পেয়েছে। সেই জমির ২২ শতক বিভিন্ন প্রয়োজনে ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। বাকি ১১ শতকে বাড়ি। একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ ও তাদের ৪ মেয়ে এবং একমাত্র ছোট ছেলেকে নিয়ে বাস করছেন তিনি।
কিছুদিন ধরে নানা অজুহাতে বসতবাড়ির ওই জমিটুকু বিক্রির জন্য চাপ দিয়ে আসছে পাড়ার মৃত তসির পানাতির ছেলে ফারাজ উদ্দীন, সেরাজুল, ওবায়দুলসহ পার্শবর্তী কাছুয়া মামুদের ছেলে এজাবুল ও গিয়াস উদ্দীনের ছেলে আতিয়ার এবং তাদের সহযোগীরা। বৃদ্ধ জামাল উদ্দীনের ছেলে সামবারু এতে সম্মত না হওয়ায় শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র।
বুধবার (১৮ জানুয়ারী) বিকাল ৪ টায় সামবারুর স্ত্রী সামিনা বেগম বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, জমিটা আধা মাগনা দামে কিনতে চায় ফারাজ গংরা। ইতোমধ্যে আমার শ্বশুড়কে ভুল বুঝিয়ে ও খপ্পরে ফেলে তারা বসতভিটার ২২ শতক সহ আবাদি অনেক জমি একেবারে কম দামে লিখে নিয়েছে। বাড়ির আশেপাশের কয়েক শতক তাদের দোসর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। অনেক দেন দরবার করে সাবেক চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতার মাপজোক করে বের করলেও তারা দখল ছাড়েনি।
সেই জমি চাইলেই ঝগড়া বাধায় আর দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ডিসেম্বর বাড়ির একটি গাছে মৌচাক নিয়ে ঝগড়া বাধায় এবং তা নিয়ে নিজেরাই ঘরে আগুন লাগিয়ে চুরি ও আগুন দেয়ার মিথ্যে মামলা করে। পুলিশ ডেকে এনে মৌচাকসহ গাছ কেটে ফেলার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে পুলিশ উভয়পক্ষকে নিবৃত করে। এরই জেরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়।
সামিনার ছোট মেয়ে সাহিজা বলেন, হামলা করে ঘরের বেড়া, দরজা জানালা ভেঙে ফেলে। এক পর্যায়ে আমাকে জোরপূর্বক টেনেহিচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে এনে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। মজিবরের ছেলে শাহিন আমার গালে কামড় দেয়। আমার মা এসে বাধা দিলে তাকে এলোপাথাড়িভাবে লাঠিসোটা দিয়ে মারে। এতে মায়ের মাথা ফেটে যায় ও সারা শরীরে জখম হয়।
এসময় জব্বারের ছেলে জহুরুল আমাকে জাপটে ধরে আটকে রাখে। আমার বৃদ্ধ দাদা জামাল উদ্দীন (৮২) ও ছোট ভাই আপন (১২) এবং বাড়িতে বেড়াতে আসা বড় বোন ঝরনার মেয়ে তাসলিমা (১৪) ও মেঝ বোন নুরবানুর মেয়ে রুমা (১৫) কে মারপিট করে। পরে লোকজন আসলে তারা চলে যায়। তবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ছাড়বে বলে হুমকি দেয়।
বড় মেয়ে মোসলেমা বলেন, আমরা তিন বোন বিবাহিত শ্বশুর বাড়িতে থাকি। আমার বাবা মা শান্ত স্বভাবের। বড় কোন ভাইও নাই। দাদাও বৃদ্ধ। সব দিক দিয়ে পুরো পরিবার খুবই দূর্বল ও অসহায়। আর এই সুযোগে বসতভিটার প্রতি লোলুপ চক্রটি নানামুখী অত্যাচার করছে।
সেদিনের ঘটনায় মাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে তারা বাধা দেয়। ফলে রংপুর মেডিকেল চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে থানায় মামলা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত চরম জীবননাশের হুমকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
বাড়িতে বসবাস করাই দূরহ হয়ে পড়েছে। কারণ সবসময় তারা পাহারারত। পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া বাধাতে সচেষ্ট। বাড়ির মেয়েরা গোসল করার সময় উঁকিঝুঁকি মারাসহ নানাভাবে হয়রানী করে চলেছে। তার উপর মৌচাকের বিষয়ে মিথ্যে তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পত্রিকায় নিউজ করিয়েছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাথে এখন সামাজিকভাবে হেয় করছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
এব্যাপার কামারপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ফারাজরা সংবাদ সম্মেলন করে যে বলেছে আমি মৌচাক কাটার নির্দেশ দিয়েছি। তা আদৌ সঠিক নয়। বরং এবিষয় আমি কিছুই জানিনা। কারণ আমি ঢাকায় অবস্থান করছি।