মোঃখোরশেদ আলম,বিশেষ সংবাদধাতা:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুন্সিরহাট বাজারের মমতাজ জুয়েলার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলম স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাইভেটকারে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিচারপতি স্টিকার লাগিয়ে অবৈধ এ ব্যবসার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
মুন্সিরহাট বাজারে জাফর টাওয়ারের সামনে পুলিশ স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার থেকে দুইটি বড় ব্যাগ নিয়ে চালক ও এক ব্যক্তি মমতাজ জুয়েলার্সে প্রবেশ করে। তাৎক্ষণিক চৌদ্দগ্রামে কর্মরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশ স্টিকার
লাগানো প্রাইভেটকারটি দেখে সন্দেহ হলে থানায় খবর দেয়া হয়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারটি সরিয়ে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের
জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে মুন্সিরহাট বাজারে মমতাজ জুয়েলার্স নামে স্বর্ণ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ সুযোগে সে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা করে আসছে। এতে করে কম সময়ে জাহাঙ্গীর আলম তিন তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়িসহ অনেক
সম্পত্তির মালিক বনে যায়। গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুন্সিরহাট বাজারে জাফর টাওয়ারের সামনে পুলিশ স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার(ঢাকামেট্রো-গ-১২-৫২৬০) দাঁড়ায়। মুহুর্তের মধ্যে
প্রাইভেটকার থেকে দুইটি বড় ব্যাগ নিয়ে চালক কুমিল্লা কোতয়ালী থানার রামমালা এলাকার সামছুর পুত্র মাসুদ ও এক ব্যক্তি মমতাজ জুয়েলার্সে প্রবেশ করে। চৌদ্দগ্রামে কর্মরত ১১ সাংবাদিক ওই পথ দিয়ে আসার সময় ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার লাগানো ওই
প্রাইভেটকারের সামনে দাঁড়ান। মুহুর্তের মধ্যে খবরটি চৌদ্দগ্রাম থানায় জানানো হলে এসআই বিকাশ বড়ুয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই জাহাঙ্গীর আলম তার কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারটি সরিয়ে
নেয়। এ সময় সাংবাদিকদের সাথে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও পথচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। থানা পুলিশের সামনে জাহাঙ্গীর আলম প্রাইভেটকারটি সরিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও পথচারি সাংবাদিকের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার, এরা প্রতিদিন পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারপতি স্টিকার লাগিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রতিদিন মমতাজ জুয়েলার্সের অন্তরালে ৪-৫ কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা চলে। এ কাজে প্রাইভেটারকারটি ছাড়াও ৪টি মোটর সাইকেল ব্যবহার করে তারা। জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি বিশাল সিন্ডিকেট মুন্সিরহাট বাজার থেকে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম ও সদর
দক্ষিণসহ দেশের বিভিন্নস্থানে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা চালালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে’।ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রায় বলে থাকে প্রশাসনের
বিভিন্ন সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকে মাসোহারা দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দুবাইতে অবস্থানকালিন সময়ে জাহাঙ্গীর আলম অবৈধ কাজের কারণে জেলও খাটে। এরপর গত ৬-৮ বছরে সে আগুন ফুলে কলাগাছ বনে গেছে’।
মুন্সিরহাট বাজারস্থ মমতাজ জুয়েলার্সের কর্মচারি শুক্রবার দুপুরে রাখাল দেবনাথ বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম স্বর্ণ চোরাচালান করে না। কিন্তু বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার ও অন্যান্য অলঙ্কার আসে। স্বর্ণগুলো একটি প্রাইভেটকার ও চারটি মোটর সাইকেল যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলার্সে নেয়া হয়’।
ঘটনাস্থলে থাকা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম হুন্ডির ব্যবসা করে কি না আমার জানা নেই। তবে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা স্বর্ণ কিনে তারা ব্যবসা করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সাথে যাতে অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্য মিমাংশার চেষ্টা করেছি’।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার কথা অস্বীকার বলেন, ‘আমি স্বর্ণ ব্যবসা করছি। তবে প্রাইভেটকারে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিচারপিত স্টিকার লাগিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি’।
চৌদ্দগ্রাম সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে বলেন, ‘আমি মাত্র বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো’।