অনিশ্চিয়তায় সৈয়দপুরের মীম ও আজিজুলের ভবিষ্যৎ
সাদিকুল ইসলাম সাদিক সৈয়দপুর নীলফামারীঃ বড় মেয়েটির বয়স আট পেরিয়ে নয় বছর। ছোট ছেলেটির বয়স কেবল ছয় বছর। তাদের নিয়ে অন্তরা খাতুনের অনেক আশাভরসা। ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করতে চান। মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান৷ কিন্তু তিনি কি তা পারবেন? তার পক্ষে কি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জুগানো সম্ভব?
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাইপাস সড়কের খালেক পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন অন্তরা। অভাবের সংসার তবে সুখের অভাব ছিলোনা। বেশ ভালোই দিন কাটতো তাদের। অন্তরা খাতুনের স্বামী নুরুল ইসলাম পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। গত তিনবছর ধরে নারায়ণগঞ্জের একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। স্ত্রী-সন্তানকেও সেখানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বারবার তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গেন। স্ত্রীর সাথে প্রায় খারাপ ব্যবহার করতেন।
গেলো প্রায় দুইমাস ধরে নুরুল তার স্ত্রী-সন্তানদের আর কোন খোজখবর নেননা। কোনপ্রকার ভরনপোষণও দেননা। নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি নিজেকে স্ত্রী-সন্তানের আড়ালে রেখেছেন। যে দোকানে কাজ করতেন সে দোকানেরও কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। এমন্তবস্তায় অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্তরা খাতুন।
ঘরে চাল নেই, কোন বাজারঘাট নেই। ক’দিন ধরে বাড়িতে ঠিকমতো রান্নাবান্নাও হয়নি। কোন বেলা খেয়ে তো কোন বেলা না খেয়ে। দুই সন্তানের জননী অন্তরার দিন কাটছে এখন অনাহারে। যদি কেউ কোন কিছু খেতে দেন তবেই সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পান।
ছোট ছেলেটি ঈদের দিনে একটু গরুর গোসত খেতে চেয়েছিলো। কেউ না কেউ একটু হলেও তো মাংস দিবে। এ আশায় সকাল সকাল মশলা বেটে রেখেছিলেন। কিন্তু সকল পেরিয়ে বিকেল হয়ে যায়। তবুও অন্তরা খাতুনের কপালে একটুকরো মাংস জুটেনি। আশাহত সন্তানকে কষানো মশলা দিয়েই ভাত খাইয়ে দিয়েছেন।
অন্তরা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান,’ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আজ আমি খুবই দুর্বিসহ জীবনযাপন করছি। তাদেরকে ঠিকমতো খেতেও দিতে পারছিনা। এমন্তবস্তায় কি করবো আর না করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। চোখের সমস্যার কারণে অনেক জায়গায় কাজ খুজেও পাইনি।’
তিনি আরো জানান, ‘আমার স্বামী এর আগেও প্রায় বছর খানিক আমাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলো। এবারও সে আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ করছেনা। ভরণপোষণও দিচ্ছেনা। বাড়িভাড়াও বাকি পড়ে রয়েছে। বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। এমন অবস্থায় কই যাই? কি করি? আমার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই।’
অন্তরা খাতুনের নিজের পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তিনি বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে তার অনেক স্বপ্ন সন্তানদেরকে নিয়ে। বড় মেয়ে মীম চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে। ছোট ছেলে আজিজুলও স্কুলে যেতে শুরু করেছে। তিনি যে করেই হোক তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যান। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজের সকল কষ্ট লাঘব করতে চান। তবে আর্থিক দৈন্যদশায় আজ তাদের ভবিষ্যৎ প্রায় অনিশ্চিত।