আজিমনগর রেলস্টেশন অবরোধ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ২০০ জনের নামে মামলা, আটক ৪
এ জেড সুজন মাহমুদ, সত্যকণ্ঠ; স্টাফ রিপোর্টার:
নাটোরের লালপুরের আজিমনগর স্টেশনে ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন যাত্রীবাহী ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, ট্রেন অবরোধ, স্টেশনের কাউন্টারের গ্লাস ও যন্ত্রপাতি ভাংচুর এবং সহকারী স্টেশন মাস্টারকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
আবারো আজিমনগর স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পদ নষ্ট, ভাংচুর ও ট্রেন অবরোধের অভিযোগে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (৪ জুন) উপজেলার আজিমনগর রেলস্টেশনে গোপালপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে কর্মসূচি পালনকালে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার মধুবাড়িরর মৃত শফিউল আলমের ছেলে মো. নাদিম আলম
(৩০), কালুপাড়ার মো. হযরত আলীর ছেলে আহমেদ রেদুয়ান (১৮), মধুবাড়ির বদরুদ্দোজা সরকারের ছেলে শরিফুল কবির সজিব (৩৪) ও গোপালপুর বাজারপাড়ার সরোয়ার হোসেনে ছেলে আব্দুল মমিন (১৯)।
প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১০টার দিকে আজিমনগর স্টেশন চত্বরে ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন যাত্রীবাহী ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। এতে উপস্থিত ছিলেন, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও গোপালপুর অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল আকতার, সাংস্কৃতিক বিষয়ক
সম্পাদক সাইফুল ইসলাম,নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কাস পার্টির সদস্য ও নাটোর জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, আখচাষী নেতা আনছার আলী দুলাল, লালপুর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল প্রমুখ। এ সময় শিক্ষক-ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-
পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বক্তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন ‘আজিমনগর’। এই স্টেশনে বেশিরভাগ ট্রেনের স্টপেজ নেই । সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটিরও স্টপেজ রাখা
হয়নি। এতে করে রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হবে দুই উপজেলার প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ। অবিলম্বে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজিমনগর স্টেশনে যাত্রাবিরতির দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে কর্মসূচি চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকাতে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনেটি আজিমনগর স্টেশনে প্রায় ৭ মিনিট অবরুদ্ধ করে রেখে স্লোগান ও বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। অপর দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনেটি আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে
এলাকার আউট সিগনালে প্রায় ১৫ মিনিট যাত্রা বিরতি করে। এরপর স্টেশনে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি রেললাইন অবরোধ করে লাল নিশানা দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলে কোন রকম তোয়াক্কা না করে ট্রেনটি দ্রুতগতিতে চলে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাৎক্ষনিক রেললাইন থেকে সরে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান।
ট্রেনটির গতি না কমিয়ে আন্দোলনকারীদের চাপা দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা স্টেশন ভবনে টিকেট কাউন্টারের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। স্টেশন মাস্টারের ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করে ও যন্ত্রাদি তছনছ করে।
আজিমনগর সহকারী স্টেশন মাস্টার আমিনুল ইসলাম বলেন, ট্রেন থামানো দাবিতে বিক্ষুদ্ধ জনতা স্টেশন ভবনে টিকেট কাউন্টারের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। তাঁকে মারপিট করে ও যন্ত্রাদি তছনছ করে। তিনি অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন,স্থানীয় থানা ও ঈশ্বরদী জিআরপি থানার পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রেলওয়ে স্টেশনে ঘটনা ঘটায় ঈশ্বরদী জিআরপি পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) মিহির রঞ্জন দেব বলেন, এ ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন,
বিক্ষোভকারীরা স্টেশন কাউন্টার ও যন্ত্রপাতি ভাংচুর করে। এ সময় স্টেশন মাস্টারকে মারপিট করে আহত করেন। যার কারণে তাৎক্ষনিকভাবে স্টেশনের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।