আমাদের দেশের প্রতিটি প্রবর্তনের ভিতরে যত দুর্যোগ আছে, যত সংগ্রাম আছে, যত সংকট আছে সেখানে পুরুষের পাশাপাশি আমাদের মেয়েরা সবসময় উজ্জ্বলভাবে থেকেছে-উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ
বিলাল হুসাইন,চিফ রিপোর্টার:ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ :
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, আমাদের দেশের প্রতিটি প্রবর্তনের ভিতরে যত দুর্যোগ আছে, যত সংগ্রাম আছে, যত সংকট আছে সেখানে পুরুষের পাশাপাশি আমাদের মেয়েরা সবসময় উজ্জ্বলভাবে থেকেছে।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ জুলাই বিপ্লবে মেয়েরা ছিল সর্বাগ্রে কিন্তু কালক্রমে ইতিহাস থেকে তাদের অর্জন অবজ্ঞা করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে সমাজ থেকে তারা হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে যে সকল নারীরা শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের অর্জন ধরে রাখতে হবে, নারীদেরকে আমরা আর হারিয়ে যেতে দেব না।
আজ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজনে অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪ এর আওতায় ঢাকা বিভাগের অদম্য নারীরদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) রাজা মুহম্মদ আব্দুল হাই প্রমূখ।
উপদেষ্টা বলেন, আমার দেশের অর্থনীতির কথা যদি বলি গার্মেন্টস রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে জাগিয়ে রেখেছে হাজার হাজার নারীশক্তি। অর্থনৈতিক মেরুদন্ডে আমার দেশের কৃষির গুরুত্ব কম নয় উল্লেখ করে বলেন, এ কৃষি কজে আমার দেশের নারীর যে উপস্থিতি, নারীর যে পরিশ্রম এবং নারীর যে অবদান সেটা আমরা তা খুব সহজে ভুলে যাই, শুধু তাই নয় আমাদের মনোজগতে তার অবদান টুকু আমরা মনে রাখতে পারি না অথচ দেখা গেছে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে আমাদের টেবিল পর্যন্ত অবাধে পৌঁছে দিতে তাদের কতটা শ্রম দিতে হয়। কালক্রমে তাদের অর্জন অবজ্ঞা করার ফলে তারা আমাদের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।
প্রতিটি নারীর জীবনে একটা সংগ্রাম থাকে, এ সংগ্রাম অতিক্রম করে নারীরা যে অর্জন করে তা অনেক বড় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আজ যে সকল নারী যারা কর্মে, মনোবলে, সংগ্রামে এবং সাহসের সাথে অসীম সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা শুধু সমাজের একটি পুরস্কার নয়, সমাজের এক বড় উজ্জ্বল নক্ষত্র, সেই বার্তাটি বহন করে এই পুরস্কারে। তিনি এ অদম্য নারীদেরকে যারা ইতিমধ্যে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন তাদের প্রতি সম্মাননা জানান।
অনুষ্ঠানে পাঁচজন শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী যথাক্রমে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী- সপ্না রানী ঘোষ, জেলা রাজবাড়ী; শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী- মাসুদা আক্তার, জেলা নারায়ণগঞ্জ; সফল জননী শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী- সেলিনা মজিদ, জেলা কিশোরগঞ্জ ; নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী- লিপি বেগম, জেলা ফরিদপুর; এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী- সামর্তবান, জেলা ফরিদপুর।
শ্রেষ্ঠ অদম্য ৫ ক্যাটাগরির নারীদের সাফল্য কথা বিভিন্ন অবদানের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্যে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বড় করে একটা কারখানা তৈরি করবো, যার মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত নির্যাতিত নারীরা কাজ করে সম্মানের সাথে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। পরে উপদেষ্টা অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাফল্য অর্জনকারী অদম্য নারীদের মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন।