আবু নাসের হুসাইন, ফরিদপুর:
দিনমুজুর, ভূমিহীন মো. গিয়াস উদ্দীন শেখ। ছয় বছর বয়সে তার বাবা-মা মারা যান। অল্প বয়সে তিনি বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট দুই বোন নিয়ে দাদি ও চাচার কাছে থেকে বেড়ে ওঠেন। বড় হয়ে দিনমজুরের কাজ করে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দেন গিয়াস। তবে সম্পত্তি আর বাড়িঘর না থাকায়
গিয়াসের বয়স ৩০ পার হয়ে গেলেও তিনি বিয়ে করতে পারেনি। ভূমিহীন ছেলের সঙ্গে কেউ মেয়েও বিয়ে দিতে রাজিও হয়নি। বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর গিয়াসকে উপহার দেন। ওই ঘর পেয়েই বিয়ে করার সুয়োগ পান তিনি।
গিয়াস ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত বতু শেখ ও হাসিনা বেগম দম্পতির ছেলে। গিয়াস বর্তমানে মাঝারদিয়ার কুমারপট্টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নববধুকে নিয়ে বসবাস করছেন।
এদিকে গিয়াসের জীবন কাহিনীসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিয়ে “স্বপ্নের ঠিকানা” নামক একটি নাটকের গল্প লিখেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন (শাহিন সপ্তম)। আর তার লেখা এই গল্প অবলম্বনে পরিচালক সেলিম রেজা সেন্টু নির্মাণ করছেন নাটক ‘স্বপ্নের ঠিকানা’।
রবিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কুমারপট্টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নাটকের শুটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। শুটিং উপলক্ষে গিয়াসের ঘরে সাজানো হয়েছে নবদম্পত্যির বাসর ঘর। গত ২৫ জানুয়ারি তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলেও রবিবার আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। আর এসব দৃশ্য ধারণ করে নেওয়া হচ্ছে নাটকের অংশ হিসেবে।
ভূমিহীন গিয়াস উদ্দীন শেখ বলেন, ছয় বছর বয়সে আমি ও আমার ছোট দুই বোন বাবা-মাকে হারিয়েছি। আমার বাবা ছিল দিনমজুর। তার কোনো সম্পত্তি বা বাড়িঘর ছিল না। এরপর আমরা ছোট তিন ভাইবোন দাদির কাছে থেকে বড়
হয়েছি। সেখানে থেকেই আমি উপার্জন সক্ষম হয়ে দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করেছি, তা দিয়ে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বাড়ি বা কোনো সয়-সম্পত্তি করতে পারেনি। যেকারণে আমি নিজে বিয়ে করতে পারছিলাম না। বাড়িঘরহীন ছেলের সাথে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না।
তিনি আরো বলেন, পরে ঘটনাটি ইউএনও স্যারকে জানালে তিনি আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর উপহার দেন। ওই ঘর পাওয়ার পর আমি বিয়ে করেছি। ঘর উপহার দিয়ে আমাকে সংসার করার সুযোগ করে দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে ইউএনও স্যারকেও ধন্যবাদ।
গিয়াসের কাকি সবজান বেগম বলেন, অল্প বয়সে গিয়াসের বাবা-মা মারা যায়। তাদের কোনো বাড়িঘর ছিল না। তাই গিয়াস বিয়েও করতে পারিনি। পরে সরকারি ঘর পাওয়ার পর গত ২৫ জানুয়ারি গিয়াস আমাদের নিয়ে
পাশ্ববর্তী নগরকান্দার ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে রিতু আক্তারকে দেখতে যায়। সেখানে মেয়ে পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে গিয়াস-রিতুর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ শুরু করেন। সেই উদ্যোগে সালথায় ৬৩৩টি ঘর এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর যে সকল উপকারভোগিদের দেওয়া হয়েছে, তারা এখন সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।
তাদের অনেক সফলতা আছে। ফরিদপুরের মান্যবর জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমরা সেই সফলতা গল্পকে তুলে ধরতে চেয়েছি। কুমারপট্টি আশ্রয়ণে আমরা একটি ভিন্নতর সফলতা দেখেছি। সেই গল্পটি তুলে ধরে আমি একটা নাটক লিখেছি। নাটকের নাম ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সেই গল্পকে নাট্যরূপ দিয়ে, তারাই শুটিং শুরু করেছি।
তিনি আরো বলেন, নাটকের মূল বিষয় হলো গিয়াস। যাকে আমরা একটি ঘর উপহার দিয়েছি। তিনি চার বছর বয়সে তার মাকে হারায়, ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারায়। দুটি বোন ও এক ভাই মিলে প্রথমে দাদি ও পরে চাচার কাছে বসবাস করতো। সেই কষ্টকর জীবনের মধ্যদিয়ে গিয়াস তার দুটি বোনকে বিয়ে দিয়েছে। অথচ নিজে বিয়ে করে সংসার পাতার মত কোনো স্বপ্ন সে দেখতে পারেনি।
কারণ তার জমিও নাই ও ঘরও নাই। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই শতাংশ জমিসহ একটি ঘর দিয়েছি। ঘর দেওয়ার পর তার মধ্যে বিয়ে করে সংসার করার যে স্বপ্ন ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি এসব টোটাল ঘটনাকে নিয়ে একটি গল্প বানিয়েছি। সেই গল্পের ওপরেই এই নাটক নির্মিত হচ্ছে।