জানা গেছে, জেএল ৩৪ নং লতাচাপলী মৌজার আর এস খতিয়ান ১৫৬, এস এ ৬৪৪ নং খতিয়ান এবং রায়তী ২৩৯ নং খতয়িানের এস এ ৫৩৬০, ৫৩৬১, ৫৩৬২, ৫৩৭৫,৫৩৪২,৫৩৮২,৫৩৫১, ৫৩৫৯,৫৪৪৮ নং দাগের ১৬.৯৭ একর জমির মালিকানা নিয়ে পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে রাখাইনরা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। যার মামলা নং ৫৭/১৯৯৮। এ মামলায় রাখাইনরা ডিগ্রি পায়। পরবর্তীতে বিবাদী পক্ষ উক্ত রায় ডিগ্রির বিপরীতে জেলা দ্বায়রা জজ আদালতে ০৮/২০১৭ ও ০৯/২০১৭ আপিল করে। ওই আপিলে রাখাইনরা পুনরায় রায় ডিগ্রি পায়। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ ওই বছর পটুয়াখালী ১ম যুগ্ম জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চাইলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে বিবাদী পক্ষ কাজ করিলে আদালতে ভায়লেশন মামলা করা হয়। যাহা চলমান রয়েছে।
কুয়াকাটা কেরানী পাড়ার মাতুব্বর উচাচিং বলেন, তার স্ত্রী এবং আত্মীয় স্বজনরা জমির মালিকানা দাবী নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে মামলা চালিয়ে আসছে। আদালতের দীর্ঘ সুত্রতায় এসব বিরোধীয় জমিতে বিবাদীরা জাল দলিল সৃস্টির মাধ্যমে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে। মামলা চলমান অবস্থায় এসব বিরোধীয় জমি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধূ কর্মকর্তার সহযোগিতায় দলিল সম্পাদন করে। যাহা সম্পুর্ণ অবৈধ। তিনি অভিযোগ করেন, জনৈক আলমগীর গংরা অবসরপ্রাপ্ত ১০ জন সেনা সদস্যের নাম ব্যবহার করে বিরোধীয় জমিতে স্থাপণা নির্মাণ করছে। এছাড়াও এসব বিরোধীয় জমিতে কতিপয় ব্যক্তি নগর ও গৃহায়ন আইন অমান্য করে অনুমোদন বিহীন বাউন্ডারী ওয়াল সহ পাকা স্থাপণা নির্মাণ করছে। যা পর্যটন বিনির্মাণে বড় অন্তরায় হয়ে দাড়াবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হওয়ায় তাদের জনবল কম থাকায় বিবাদীরা জোরপুর্বক এসব করছে। তারা কুয়াকাটা পৌর মেয়র সহ জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও তা পাচ্ছেন না। তার অভিযোগ উল্টো তাদের উচ্ছেদসহ নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে আসছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি।
এ বিষয় অভিযুক্ত আলমগীর গংদের নিযুক্ত প্রতিনিধি মোঃ মনিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, রাখাইনদের বিরোধীয় জমির সাথে তাদের জমির কোন সম্পর্ক নেই। তারা হাজী ইসমাইলের কাছ থেকে ৬৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে বালু ভরাট, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করছেন। যার বিএস রেকর্ড রয়েছে। নির্মাণ কাজ বন্ধে বাদী পক্ষ থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ তাদের দাবী নামার কোন সত্যতা না পেয়ে আমাদের কাজ করার জন্য বলেছেন। কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা মিলে এই জমি ক্রয় করেছেন। অনুমোদন না নিয়ে জমির আকার আকৃতি পরিবর্তন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশাল আঞ্চলিক সমন্নয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, রাখাইনদের ভূমির মামলা জটিলতা দ্রুত নিরসনে বিচার বিভাগ ও ভূমি প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশপাশি ভূমি জটিলতার সমাধান না করে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বেআইনী। পর্যটন আইন অনুযায়ী পৌর কর্তৃপক্ষের ভবন নির্মানে অনুমোদনের এখতিয়ার না থাকলেও ঢালাও ভাবে পৌর কর নেয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ায় কুয়াকাটায় পরিকল্পিত নগরায়নে বড় বাধা হয়ে দাড়াবে এমনটাই মনে করছেন পরিবেশ আইনবিদ। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়তে হলে এখনই অনুমোদন বিহীন ভবন নির্মাণ বন্ধে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় পরিকল্পিত নগরায়ণে ব্যর্থ হবে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, সিভিল আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় পুলিশের হস্তক্ষেপ করার বিধান নেই। জমিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেখানে কোন দাগ উল্লেখ নেই। যার কারনে আইনী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জমি ক্রয় করে স্থাপণা নির্মাণ করছে। তারা বিনিয়োগকারী। তাদের দ্বারা আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা নেই।