চন্দ্রঘোনা শতবর্ষী কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র অর্থনৈতিক সংকটে বন্ধের পথে” বিত্তবান দেশওবিদেশে এনজিওদের এগিয়ে আসার দাবি স্থানীয়দের
রিপন মারমা রাঙ্গামাটি:
জটিল ও প্রতিবন্ধি কুষ্ঠ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ভিত্তিক দ্যা লেপ্রসী মিশনের অর্থায়নে রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রটি ১৯১৩ সালে স্থাপিত ষাট শয্যার একমাত্র রেফারেল বিশেষ শতবর্ষী হাসপাতাল আজ অর্থনৈতিক সংকটে বন্ধের পথে।
বিত্তশালী, বিদেশী ও আর্ন্তজাতিক সাহায্যকারী ও এনজিওদের এগিয়ে আসার দাবি হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও স্থানীয়দের।
স্থাপনের পর থেকেই তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ছাড়াও চট্টগ্রাম শহর, পটিয়া, ফেনী, মিরসরাই, কক্সবাজার, মালুমঘাটে ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগীদের নিরলভাবে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করে অত্রাঞ্চলের ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুঁড়িয়েছে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলা চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে বিদেশী ও সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধের দ্বারপ্রান্তে।শতবছর যাবৎ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলানোর পর কুষ্ঠ হাসপাতালের চরম অর্থনৈতিক সংকটের ফলে রোগীদের আগের মত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কুষ্ঠ হাসপাতালে বর্তমানে ২৫ জন কুষ্ঠ রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীপনযাপন করছে।
এদিকে ৪০ বছরে অধীক যাবত চিকিৎসা নিয়ে রোগ পুরোপুরি ভাল হলেও সমাজের
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ফলে সমাজে ঠাঁই মেলেনা কুষ্ঠ রোগীদের।তাই চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রই তাদের একমাত্র ভরসাস্থল হিসাবে জানিয়েছেন কুষ্ঠ রোগীরা।
কুষ্ঠ হাসপাতাল করিডোরে ঘুরে দেখা যায়,কুষ্ঠ রোগিদের দুপুরে খাবার আলু আর ডাল খাবারের মান নাজুক অবস্থা। আরও দেখা যায়, দেয়ালে ফাটল ও জানালা গুলো প্রায় ভাঙা যার কারণে জানালা দিয়ে প্রায় সময় সাপ, ব্যাঙ,ইদুর রোগিদের ওয়ার্ডে ডুকে পড়ে আর বিশুদ্ধ খাবার পানি, টয়লেট সমস্যাতো আছে।
খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার বিজয় মারমা বলেন, এই মহাদেশের মধ্যে একটি উন্নত কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র এটি শুরু থেকে বিদেশি দাতা সংন্থা গুলো সেবার মান খুব উন্নত ছিল।হাজার হাজার রোগি এই কুষ্ঠ হাসপাতাল থেকে সুষ্ঠ হতো তাই আমরা সরকারের প্রতি ও দেশে অর্থ বিত্তবান যারা আছে আপনারা সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিন।আমাদের খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ হাসপাতালে কুমিল্লা থেকে শুরু করে কক্সবাজার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা করে থাকি।
আমাদের খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ হাসপাতালে অনেক রোগী আছে তারা প্রতিবন্ধী অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে অবস্থান নেন। সে ক্ষেত্রে তাদের সেবাটাও বিশেষভাবে প্রয়োজন অর্থনৈতিক ব্যাপারে যেহেতু আমি এখানে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা দেশে-বিদেশে হাসপাতাল নিয়ে সহযোগিতার জন্য যায় ।
আমি চেষ্টা করেছি আমার পক্ষ থেকে যারা ডোনাল সাসা কাওয়া জিওসিএস ওয়াসিএস তাদের সহ যারা অর্থবিত্তবান আছে তাদের কাছে আমি যোগাযোগ করেছি এ হাসপাতালকে টেকসই হাসপাতাল যেন করতে পারি আগের সেবার মান যেন ফিরে যেতে পারে।
চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল-পরিচালক ডা. প্রবির খিয়াং বলেন, ১৯৯৮ সালে ডব্লিউএইচও প্রকল্প পক্ষে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দেয় লেপ্রসি একটা কন্ট্রোল মধ্যে চলে আসছে সেসময়ে বিশেষ বিশেষ হাসপাতালে অনুদান আসতে আসতে কমতে থাকে। কমার ফলে একটা সময় দেখা গেল বাইরে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছিনা তাই বর্তমান কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিচালনা করার ক্ষেতে একটা কঠিন হয়ে পরে।
হাসপাতালে আমরা শুধু রোগিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিইনা চিকিৎসা সাথে সাথে অন্য সবকিছু খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের সাপ্লাই দিয়ে থাকি। তার ফলে আমাদের একটা কুষ্ঠ হাসপাতালে রোগিদের সেবা করার একটা কঠিন হয়ে পরে।বিগত ১৩ বছর ধরে আমরা আমাদের খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল থেকে খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রায় বছরে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খরচ করেছি।আমাদের জন্য আসলে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি সমাজের বিত্তবান সরকারি দৃষ্টি দিতে চাই সমাজের অনেক কুষ্ঠ রোগি অবহেলিত আছে তাদের চিকিৎসা এখনো প্রয়োজন রয়েছে। এই রোগিদের আপনার সহযোগিতা করতে চান আপনারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই কুষ্ঠ রোগিদের জন্য আপনারা হাত বাড়িয়ে দেন।
হাসপাতালে অনেক কুষ্ঠ রোগী আছেন যাদের আরও ভালো উন্নতমানের চিকিৎসা দরকার।পাশাপাশি তাদের অপরেশনও দরকার তাদের হাত এবং চোখে অনেক ধরণের সমস্যা হয়।
কুষ্ঠ হাসপাতালে আর্থিক সমস্যার কারণে এই অপারেশনগুলো বর্তমান এই মুহুর্তে করতে পারছে না। যদি কোন স্বহৃদয়বান ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান’কে সহযোগিতার করতে এগিয়ে আসে তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের অপারেশনও শুরু করতে পারবে।
অর্থনৈতিক সংকটে কারণে যদি বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালটি তবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এসব রোগীরা কেমন কাটবে তাদের দিন সরকারের স্বদইচ্ছায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় টিকে থাকতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।