চিৎমরমে জলকেলিতে শেষ হলো মারমাদের সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে উৎসব
রিপম মারমা রাঙ্গামাটি,
রাঙ্গামাটি কাপ্তাই ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে জলকেলির (পানি ছিটানো) মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে শেষ হয়েছে। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত সাংগ্রাঁই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ জলকেলি। এই উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানায় মারমারা।
অথাৎ নববর্ষে সবাই মিলে এক সমানে এক সাথে জল খেলিতে যায়, ও ও ভাইয়েরা ও ও বোনেরা, খুশিতে মিলিত হয়।
মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাঁই জল উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় গানটি গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন ঠিক সেই সময়ে হাজার হাজার লোকের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে এই যেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছেন তাঁরা।
নববর্ষকে বরণ এবং পুরানো বর্ষকে বিদায় উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাঁই জল উৎসব বা সাংগ্রাঁই রিলং পোয়ে উৎসব উদযাপন করে থাকে।
একে-অপরকে পানি ছিটিয়ে খেলা শুরু করেন মারমা তরুণ-তরুণীরা এই সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগ্রাঁই র্যালী,ও জলকেলী এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার (এমপি) এসময় তিনি বলেন,
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন উৎসবে মেল বন্ধন হয়,এটাই আমাদের সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন, এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সবসময় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন।
চিৎমরম সাংগ্রাঁই রিলংপোয়ে উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমা ওআচিংপ্রু্ু মারমা এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা,
কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লে: কর্নেল নুর উল্লাহ জুয়েল, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মহিউদ্দিন, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, রাজস্থলী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল আহমেদ ভুইঞা।পরে অতিথিরা বিহার সংলগ্ন মাঠে জলকেলী উৎসব এর উদ্বোধন করেন।
জলকেলী উদ্বোধন শেষে মনোমুগ্ধকর মারমা সম্প্রদায়ের নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।এর আগে সকালে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা করা হয়। হিংসা-বিদ্বেষ দূরে থাক শান্ত সবুজ গিরি ছায়ায়, সকল কালিমা মুছে যাক মৈত্রীময় জলধারায় পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করতে সাংগ্রাই শুরু হয়।
মূলত ১৫ এপ্রিল মূল সাংগ্রাঁই উৎসব উদযাপন হলেও গত ১৩ এপ্রিল হতে চিংম্রং এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। দূর দূরান্ত হতে হরের রকম পণ্য নিয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়েছেন বিহার সংলগ্ন মাঠে।