‘জলকেলি’ দিয়ে শেষ হলো সাংগ্রাঁই উৎসব
রাঙামাটিতে
রিপন মারমা কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি):
জলকেলি’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব সাংগ্রাঁই। এ উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানান রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতি গোষ্ঠী।
সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো পাহাড়ের প্রধান অনুষ্ঠান বিজু, বিষু, বিহু, বৈসু, সাংগ্রাই ও সাংক্রাণ উৎসব। মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই জলোৎসবের মাধ্যমে রাঙামাটিতে শেষ হয়েছে এই উৎসব।
এদিন জলকেলিতে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। একে অপরের গায়ে পানি নিক্ষেপের মাধ্যমে পুরোনো বছরের সব জীর্ণতা-গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এই রীতিকে সাংগ্রাই জলোৎসব বলা হয়।
মারমা সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতি বছর এই আয়োজন করা হয় বলে জানালেন আয়োজকরা।পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের মাধ্যমে তাদের সামাজিক উৎসব বিজু, বিষু, বিহু, বৈসু, সাংগ্রাঁই, সাংক্রাণ পালন করে।
প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা নামে উদযাপিত এই অনুষ্ঠানকে এক্ষেত্রে বৈসাবি হিসেবে ডাকা হয়। যার মাধ্যমে সব জনগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ৩ এপ্রিল জেলা পরিষদের পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের মাধ্যমে এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের নানান বর্ণিল আয়োজন এবং বাড়িতে বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ শেষে আজ মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাঁই জলোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই বছরের বৈসাবির আনুষ্ঠিকতা।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার রাইখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) আয়োজনে জলোৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে মারমা জনগোষ্ঠী জলোৎসবে অংশ নেয়।
দুই পাশে পানিভর্তি ড্রামের পাশে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। ঘণ্টা বাজানোর পরপরই শুরু হয় একে-অপরের গায়ে পানি নিক্ষেপ। পানি নিক্ষেপের ফলে অতীতের সব গ্লানি-দুঃখ-হতাশাকে বিদায় জানিয়ে সুন্দর পরিশুদ্ধ হৃদয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়।
এসময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়। এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তরুণ-তরুণীরা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মাসসের সভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য বেগম ওয়াসাকা আয়শা খান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কাপ্তাই জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নুর উল্লাহ জুয়েল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগ্ৰাই জল উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নিউচিং মারমা ও মাসস এর সাধারণ সম্পাদক মংউচিং মারমা ।
আলোচনা সভা শেষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মং বাজিয়ে জল উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে অতিথিরা জল ছিটিয়ে সাংগ্রাই জল উৎসবের উদ্বোধন করেন।
১২ এপ্রিল ফুল ভাসিয়ে শুরু হওয়া বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠিকতা রবিবার সাংগ্রাই জলোৎবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।