জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা
আলী আহসান রবি,নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৪ নভেম্বর, ২০২৪
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, আজকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই এই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন তাদের স্বল্পমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন, এবং বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু এই গণঅভ্যুত্থানে আহত সহযোদ্ধাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলতে চাই আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদের একটি ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে এবং এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে আন্দোলনে আহতদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এই দেশের সকল সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। এমনকি যে সকল বেসরকারি হাসপাতালের সাথে সরকারের চুক্তি হবে সেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন এবং চিকিৎসা ব্যয়ভার আংশিক সরকার বহন করবে। ইতোমধ্যে আহতরা চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন সেগুলা যথাযথ ডকুমেন্টেশন পাওয়ার পর তাদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে। যারা পঙ্গুত্ব এবং অন্ধত্ব বরণ করেছেন তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সমবেদনা এবং সহানুভূতি। কিন্তু আমরা সেখানে ক্ষান্ত নই।
প্রতিটি অন্ধ মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, তার সামর্থ্যের সাথে মিলিয়ে তাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তার পরিবারের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন বরণ করেছেন তাদের জন্য যে সকল মেশিন, চিকিৎসা সেবা এবং যে ধরনের যন্ত্রপাতি সহায়তা প্রয়োজন হয় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আরো জানান, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এ আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন এবং মানসিকভাবে যে ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। এবং যাদের প্রয়োজন হবে তাদের স্ক্রিনিং করে আমাদের আটটি বিভাগে সাইকো থেরাপি দেয়া হবে। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য একটি সাপোর্ট সেন্টার তৈরি করা হবে। এবং আহতদের সকল অভিযোগ সেখানে আসবে এবং সেখান থেকে তার নিষ্পত্তি করা হবে। এছাড়া সারাদেশে সকল হাসপাতলে আন্দোলনে আহতদের জন্য শয্যা থাকবে এবং আহতরা ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সহজেই জানতে পারবেন নিকটস্থ কোন হাসপাতালে শয্যা খালি আছে। তবে যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে। এজন্য নিটোর, পঙ্গু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতালসহ ঢাকার বিশেষায়িত সবগুলো হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি হাসপাতাল এমনকি বেসরকারি হাসপাতালে যে সকল বিশেষায়িত সেবা আছে সেগুলাকে অন্তর্ভুক্ত করে আহত যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। যদি কোন চিকিৎসা দেশে না থাকে এবং বিজ্ঞানসম্মতক সম্মতভাবে চিকিৎসক বোর্ড দ্বারা রিকমেন্ড করা হয় তাদেরকে বিদেশের যেখানে চিকিৎসাটা আছে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশা করি আগামী ডিসেম্বরের ভেতর এগুলো সব দৃশ্যমান হবে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যাপারে গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আহতদের চিকিৎসা সেবা, সেবা প্রাপ্তি অর্থলাভসহ সকল ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে এবং কোন গাফিলতি পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে হবে।
এবং আহত যোদ্ধাদের ব্যাপারে সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ রকম প্রায়োরিটি দেয়া হবে এবং আহতরা দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে খুব দ্রুততার সাথে চিকিৎসা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে সকল কথা বা গুলা বললাম সেগুলোর একটা রূপরেখা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের ভেতর সবার সামনে উপস্থিত করা হবে এবং এ লিখিত রূপরেখা দেখে টাইমলাইন অনুযায়ী পরে আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা যে অঙ্গীকার করেছি সেটা বাস্তবায়নে কাজ হচ্ছে কিনা। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমরা আপনাদের পাশে আছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে মিলিত হয়েছি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য নানামুখী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলনে আহত অনেকেই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে আছেন।তাদের ভেতর ট্রমা এবং নানা কারণে বিভিন্ন রকম অনাস্থা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের অনেকগুলো সমস্যা আমাদের একসাথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই আমরা বারবার এটা নিশ্চিত করতে চাই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ রকম অগ্রাধিকার দিচ্ছি । এই উদ্যোগগুলো আমাদের আগে থেকেই ছিল এবং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই যে বিশেষ সহকারি নিয়োগ এটা কিন্তু এ বিভিন্ন রকম দাবির আগেই করা হয়েছে। গতকাল এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিত এক ধরনের মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আমরা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাগুলো দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো দ্রুত দৃশ্যমান একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই।
বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।