ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা হতে চার বছরের শিশু অপহরণ ও মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবীর ঘটনায় অপহৃত শিশুকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব-১০; অপহরণ চক্রের মূলহোতা মোঃ শাফায়েত হোসেন আবিরসহ ০২ জন আটক
সত্যকন্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক,
১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখ রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন মমিনবাগ এলাকায় বসবাসকারী মাওলানা ইমদাদুল্লার পুত্র শিশু সালমান (০৪) বাসার সামনে খেলাধুলার সময় অপহরণের শিকার হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে ভিকটিমকে না পেয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন। যার জিডি নং- ৮২৯, তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৩। পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই ২০২৩ তারিখ অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের পরিবারকে ফোন করে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবী করে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার র্যাব-১০ এর নিকট ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে অপহৃত ভিকটিম’কে দ্রততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৭ ও ১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সদরঘাট থানাধীন আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ শাফায়েত হোসেন আবির (১৯), পিতাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ২। মোঃ আল আমিন (১৭), পিতাঃ হাফেজ মোঃ শহিদুল ইসলাম, ঘোসাইঘাট, শরিয়তপুরদেরকে গ্রেফতার করে এবং উদ্ধার করা হয় অপহৃত শিশু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত অপহরণের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত শাফায়েত ও আল আমিন ভিকটিমের পাশের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত। প্রায় ০৩ মাস পূর্ব থেকে ভিকটিমকে তাদের বাসার সামনে খেলাধুলার সময় তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে এবং ভিকটিমের পিতা পবিত্র হজ্জব্রত পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছিল ঐ সময়টাকে বেছে নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল আমিন ভিকটিমকে বিভিন্ন সময়ে চিপস্, চকলেট, খেলনা ইত্যাদি কিনে দিয়ে তার সাথে সখ্যতা ও বিশ্বস্ততা অর্জন করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখ ৪.৩০ ঘটিকায় ভিকটিমের বাসার সামনে ভিকটিম খেলাধুলা অবস্থায় আল আমিন ভিকটিমকে অপহরণ করে কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার এলাকায় আল আমিনের পরিচিত তার অপর এক সহযোগি হেলালের কাছে নিয়ে যায়। পরিবর্তীতে হেলাল ভিকটিমকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় এবং শাফায়েত ও আল আমিনকে চট্টগ্রামে যেতে বলে। চট্টগ্রামে গিয়ে হেলালের পরিচিত আইয়ুবের বাসায় ভিকটিমকে রাখা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। ভিকটিমের পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদের ৫,০০০.০০ টাকা প্রদান করে এবং আলাপচারিতার একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ০৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভিকটিমকে ফেরত দিতে রাজি হয় এবং মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় আসতে বলে। অপহরণকারীদের কথা মতো ভিকটিমের পরিবার তাদেরকে আশ্বস্ত করে যে, তারা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছে এবং ভিকটিমের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে অনুরোধ করে।
গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, ভিকটিমের পরিবার মুক্তিপনের টাকা নিয়ে আসতে দেরি হওয়ায় তারা সময় অতিবাহিত এবং তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে আল আমিন এবং শাফায়েত বাচ্চাটিকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনযোগে ফেনী-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে। গ্রেফতারকৃত শাফায়েত ও আল আমিন ভিকটিমকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আইয়ুবের নিকট রেখে মুক্তিপনের টাকা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় গমন করে। অপহরণকারীদের মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের বিষয়টি র্যাব অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত নজরদারী করতে থাকে এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭ ও ১০ এর যৌথ আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় পূর্ব হতে অবস্থান নেয়। গ্রেফতারকৃত তাদের দাবীকৃত টাকা নেয়ার জন্য উক্ত স্থানে উপস্থিত হলে র্যাব তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। র্যাব গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌছালে আইয়ুব র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিকটিমকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় একা রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। র্যাব উক্ত এলাকা হতে ভিকটিমকে উদ্ধার করে।