ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় রাতের আঁধারে মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে। দিনে আড়ালে আবডালে হলেও রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় মা ইলিশ শিকার করা হচ্ছে অহরহ।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত হারে ঘুষ পরিশোধ করে রাতে মাছ শিকারের ‘অনুমতি’ নিয়েছেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন। রাতের শেষভাগে স্বল্প সময়ের জন্য মেঘনা পাড়ের জমে উঠা মাছঘাট গুলোতে হানাদিয়ে পুলিশের লোকজনও জেলেদের শিকার করা মাছে ভাগ বসাচ্ছে।
সরেজমিনে রাতের বেলা তেঁতুলীয়া ও মেঘনার বেতুয়া নতুন স্লুইজঘাট, সেন্টারের ঘাট এবং ডাকতারের ঘাট গাছির খাল ও সামরাজঘাট এলাকার মৎস্যঘাট গুলোতে মা ইলিশ শিকার ও রাতের আঁধারে বেঁচা-বিক্রির উৎসব দেখা গেছে। যদিও এসময় মেঘনা নদী বা সংলগ্ন ঘাটগুলোতে প্রশাসনের কোন লোকজনের উপস্থিতি দেখা যায়নি। জানা যায়,
চরফ্যাসনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মেঘনাও তেঁতুলীয়ার মৎস্য ঘাটেঘাটে দালালদের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকারের‘অনুমতি’ দিয়েছে। এজন্য রাতের মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় মা ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে। নদীতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মা ইলিশ শিকারের খবরে মেঘনা ও তেঁতুলীয়ার নতুন স্লুইজ,
সেন্টারের ঘাট এবং ডাকতারের ঘাট ও গাছির খাল, সামরাজ ঘাট এলাকায় গেলে দেখা যায় দিনে ও মধ্যরাতে জাল ফেলার সময় হলে জেলেরা জাল নৌকা নিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় নেমে যাচ্ছে জেলেরা। রাত ৩টার পর থেকে জেলেরা নৌকা ভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে থাকে।
কিন্ত সংবাদকর্মীদের ‘অপ্রত্যাশিত’ উপস্থিতির খবর পেয়ে জেলেরা ঘাট ছেড়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন স্লুইজঘাট ও গাছির খাল ঘাটের জেলেরা জানান, মৎস্য অফিসের সাথে আতাঁত করে একটি দালাল চক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য জেলেদের থেকে নিদিষ্ট হারে টাকা নিয়েছে। যেসব জেলেরা টাকা দিয়েছে প্রত্যেক রাতে কেবল সেই সব জেলেরা রাতের মেঘনায় মাছ ধরতে পারছে।
গাছির খাল ঘাটের জেলে মহসিন জানান, রাতের মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় শিকার করা মাছের একটা অংশ প্রতি রাতে দালালদের থেকে পুলিশ বুঝে নিচ্ছে। আর দালালরা ৫ হাজার টাকা পোন (১ পণ=৮০টি) দরে জেলেদের থেকে কিনে নেয়। পরে এই মাছ তারা (দালাল) সাড়ে ৭ হাজার টাকা পণ দরে বাছাইকৃত স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে।
নুরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিরাতেই মা ইলিশ শিকারে মেতে থাকে জেলেরা। দুলারহাট থানার গাছিরখাল বেড়ির মাথায় ভোর রাতে বসছে ইলিশের হাট। মৎস্য বিভাগ ও থানা পুলিশকে জানালেও আমলে নেই কেউ। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, মৎস্য বিভাগের দুইটি টিম মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় দিন রাতে টহল চলমান থাকে।
এছাড়াও কোষ্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের অভিযানিক দলের টহল চলমান রয়েছে। দুটি নদীর দুরত্ব হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। মাছ ধরতে দেয়ার জন্য কারা টাকা নেয়া ঘাটে ঘাটে মা ইলিশ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে গত ১২ দিনে ৪৮ জেলেকে দন্ড দেয়া হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা । জব্দকৃত জালের পরিমান প্রায় ৬০ হাজার মিটার।