নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পটুয়াখালীর মহিপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রসব করাতে গিয়ে আয়ার হাতে নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে মহিপুর থানা সদরের কেয়ার মডেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসকের দায়িত্ব নেয়া ওই আয়া নিজেই প্রসূতির ডায়াগনইসিস রিপোর্ট পর্যালোচনা করে স্বাভাবিক ডেলিভারীর আশ^াসও দিয়েছেন। একই সাথে ডাক্তার না ডেকে নিজেই সনাতনি পদ্ধতিতে ডেলিভারী করতে গিয়ে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে প্রসূতির স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে মহিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থালে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই আয়া পরভীন এবং নার্স মানসুরাকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
মহিপুর থানা পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, মহিপুর থানা সদর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের আনোয়ারের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী সন্তান সম্ভাবা শারমিন বেগম (৩৩) কে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় পারভীন নামে ওই আয়া অপারেশনথিয়েটারে নিয়ে ডেলিভারী করান। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মানসুরা (৩০) আসার আগেই নবজাতক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর ডাক্তারকে ফোন করা হলে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছে নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।
নবজাতকের বাবা আনোয়ার আরো জানান, তার দুই মেয়ে সন্তানের পর এই ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। ছেলে সন্তানের আশায় তিনি তৃতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সেই আশা অনুযায়ী ছেলে সন্তান হলেও আয়া আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবার ঘোষণা থাকলেও ওই সময় কোন চিকিৎসক ছিলেন না। প্রসূতি শারমিন এবং তার স্বামী আনোয়ার ও তার স্বজনরা অভিযোগে বলেন, এভাবে আর যেন কোন মা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। সন্তান হারা না হয়। তাদের দাবী এ হাসপালে এর আগেও ডেলিভারী করার সময় দু’টি নবজাতক মারা যায়।
হাসপাতালের আয়া পারভীন ও নার্স মানছুরা জানান, প্রসুতির ডায়াগনইসিস রিপোট অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারী হবার কথা, হয়েছেও তাই। এজন্য তারা ডাক্তারকে ডাকেননি। তবে ডাঃ ছাড়া কিভাবে এমন ঝুকিঁ তারা নিলেন তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তারা।
ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ পপি সুর জানান, হাসপাতাল থেকে তাকে নরমাল ডেলিভারীর হবার কথা জানালে ফোনে তিনি নার্সকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এসে দেখেন বাচ্ছা মৃত।
হাসপাতালটির মালিক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আল্টাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারী হবার কথা ছিল বলে ডাক্তার ডাকা হয়নি। তার দাবী রোগি হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই বাড়িতে বসে স্থানীয়ভাবে ডেলিভারী করানোর চেস্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। নবজাতকের গলায় নারী পেচানো ছিল। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আয়া এবং বক্তব্য পরস্পর বিরোধী।
তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ডাক্তারের সাইন বোর্ড জুলিয়ে রাখা হলেও তা শুধু কাগজে কলমেই রয়েছে। বাস্তবে এক দুইজন চিকিৎসক রয়েছে। তা অনিয়মিত। নার্স আয়াদের দিয়েই চলছে চিকিৎসা।
মহিপুর থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, তদন্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।