নিজস্ব প্রতিবেদক:
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই কুপিয়ে জখম করে বড় দুই ভাইকে। চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে মেঝ ভাই ছোট ভাই আবু মুন্সির (২৮) হাতের কব্জি কেটে ফেলে দিল।
পটুয়াখালীর লতাচাপলী ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামে (১১ সেপ্টেম্বর) বুধবার সকালে নিজ বাড়ীতে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। বর্তমানে আবু মুন্সি বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় আবু মুন্সির দ্বিতীয় স্ত্রী বাদী হয়ে মহিপুর থানায় একটি মামলা করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় আবু মুন্সির বাবা নুরু মুন্সিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তিন ভাই নাসির মুন্সি (৪৫), বশির মুন্সি (৩৮) ও আবু মুন্সি (২৮) এর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
বাবা নুরু মুন্সি তিন ছেলের দন্দ মিটাতে স্থানীয়দের নিয়ে পারিবারিক ভাবে বসে নিজের সকল সম্পত্তি তিন ছেলের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দেন। জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা করে দেবার পরও ছোট ছেলে আবু মুন্সি প্রতিদিন নানা অজুহাতে বড় ভাই ও মা বাবার সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়তো। বাবা মা ভাই বোনদের গালিগালাজ, মেরে ফেলার ভয়ভীতি সহ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবার হুমকি দিয়ে আসছিলো। এ নিয়ে এলাকাবাসী একাধিক বার বসে মিমাংসার চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়।
কিছুতেই থামছে না। দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আতঙ্কে কাটে বাবা মা ভাই বোন সহ এলাকার মানুষ।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বড় ভাইদের জমির চাষাবাদ করা নিয়ে ছোট ভাই আবু মুন্সি বড় ভাই নাসির মুন্সি ও মেঝ ভাই বশির মুন্সি কে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। কুয়াকাটা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। এতে নাসির মুন্সির পায়ের দুটি রগ কেটে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম মাল বলেন, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে আমরা এলাকার মানুষ আবু মুন্সিসহ আহত দুই ভাইদের বিবাদ মিমাংসা নিয়ে কথা বলেছি। তার একটু পর আবু মুন্সি বটতলা বাজারে গেলে মেঝ ভাই বশির মুন্সির সুমুন্দি সহ তার ছেলেরা আবুকে রশি দিয়া গাছের সাথে বেধে রাখে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা আবু মুন্সি কে উদ্দ্বার করে তার বাবার হাতে সোপের্দ করা হলে সে বাড়ীতে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পর শুনতে পাই আবু মুন্সির হাতের কব্দি কেটে ফেলেছে। এর পর আমি সহ স্থানীয়রা উদ্ধার করে তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশালে পাঠিয়ে দেই। তিনি আরো বলেন, বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় জমিজমা তিন ভাইয়ের মধ্যে বন্টন করে দেয়। সেই মোতাবেক তারা সেখানে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। কিন্তু ছোট ছেলে আবু মুন্সি বেপরোয়া। সে কারও কথা শোনে না।
স্থানীয়রা জানান, আবু মুন্সি আগে মাদক বেচাকেনার পাশাপাশি সেবন করতো। বড় ভাইদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করার পরও তাদের সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাড়ি ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম হাওলাদার নিজে এসে বুধবার সকালে ঘরের তালা খুলে দেয়।
আবু মুন্সির বৃদ্ধা মা জোলেখা বিবি (৮০) কান্না জরিত কণ্ঠে বলেন, আমার তিনটা ছেলে নাসির মুন্সি (৪৫), বশির মুন্সি (৩৮), আবু মুন্সি ( ২৮) তিন জনই আজ হাসপাতালে। এই বৃদ্ধ বয়সে আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারলাম না। আমার ছোট ছেলে কাউকে মানে না ও কারো কথা শোনে না। আমার থাকার ঘর মেয়েরা তৈরি করে দিয়েছে সেই ঘরও ভেঙে ফেলতে চায় ছোট ছেলে আবু। কিছুই বলার নাই। এলাকাবাসী বার বার শান্ত থাকার কথা বললেও তাদের কথাও শোনেনি। আমরা বর্তমানে অসহায়।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার তদন্ত কর্মকতা মোঃ নোমান হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে হুকুমদাতা হিসেবে আবু মুন্সির বাবা নুর মোহাম্মদ মুন্সি কে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।