পবায় জমি দখল নিয়ে বাড়ি পোড়ানো ও মামলার অভিযোগ
সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান:
রাজশাহীর পবা উপজেলায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে বাড়ি পোড়ানো ও মামলার করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা বলেন, জমির ভাগবাটোয়ারা না হওয়ার আগেই জমি দখল করতে চাচ্ছেন একজন নারী। আর তিনিই এলাকার মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে আগুন, হামলা ও মামলা দিচ্ছেন।
সোমবার (২১ আগস্ট) রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাঈদ হাসান টনি। এসময় ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সাঈদ হাসান টনি বলেন, গত কয়েক মাস থেকে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বায়া বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে উত্তেজনা চলছে। আগে বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে নয়টি মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ করেছে, যেটা থানার তদন্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের এলাকার জমি নিয়ে সত্য সংবাদ প্রকাশের জেরে তিনি ঢাকার মহানগর আদালতে দৈনিক সানশাইন পত্রিকার সম্পাদক ও পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।
তারা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে, তা সম্পন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। লাবনী আক্তার শিল্পী একজন মামলাবাজ নারী। লাবনী আক্তার শিল্পী ও তার ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা মিলে রাতে অন্ধকারে পেট্রোল বোমা দিয়ে আমার চাচার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি কারণে অকারণে মানুষকে ফাঁসানো ও হয়রানী করার জন্য বিভিন্ন মামলা দিয়ে থাকেন। তিনি এলাকার বেশকিছু নারীকে ফুঁসলিয়ে এবং প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে যে জমির বায়নার কথা বলেছেন, তা সম্পন্ন মিথ্যা কথা। আমাদের পরিবারে এখন পর্যন্ত জমির ভাগবাটোয়ারা করা হয়নি। সে আমার ফুপু রাহেমা বেগমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জোর পূর্বক জমিতে থাকা ১৫টি পেয়ারা গাছ এবং ৩০টি কলা গাছ কেটে জমি দখল করেছে।
এই বিষয়ে একটি মামলা করা হয়েছে। এনিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে এয়ারপোর্ট থানায় ও পৌরসভার মেয়রের কাছে সালিশ হয়েছে। তাঁদের নির্দেশক্রমে জমি মাপের কাজ চলমান রয়েছে। যা মঙ্গলবার ২২ আগস্ট নওহাটা পৌরসভায় চূড়ান্ত সালিশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শিল্পী ও কাজলী পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারে এলাকায় এসে তিনি শহর থেকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে আসেন আমাকে ও আমার পরিবারের উপর হামলা করতে। কিন্তু আমরা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। আবার শুক্রবারে তিনি ওই সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসেন। কিন্তু আমরা তখনও এলাকার বাইরে অবস্থান করছিলাম।
রাতে সবাই ফিরে আসার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে আমার চাচা নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে পেট্রোল বোমা দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। লাবনী আক্তার শিল্পী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই আগুন লাগিয়েছে। পুলিশ সময় মত না আসলে সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে ফেলতো। বাড়ি পোড়ানোর আগের দিন শিল্পী বায়া বাজারে এসে প্রকাশ্যে বাড়ি পোড়ানোর ও আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট, বাড়িঘরে ভাঙচুর ও হামলার যে অভিযোগ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি রাজশাহীর স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও ঢাকা থেকে এসে বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে আমাদের উপরেই অত্যাচার চালায়। এর আগেও বর্ণালীর মোড়ে রনির চায়ের দোকানের সামনে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তার ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালায়। তারা আমাতে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছিল। প্রায় এক মাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এই ঘটনায় কোর্টে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আমার চাচা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানা মামলা করেছেন। তারা এই তিনটি মামলার আসামি। আমাদের সাথে তারা যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তা সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, লাবনী আক্তার শিল্পীর বিরুদ্ধে যে কথা বা প্রতিবাদ করবে, তার বিরুদ্ধেই তিনি মামলা করেছেন। রাজশাহীতে না পারলেও ঢাকায় গিয়ে মামলা করেন তিনি। আজ যারা এখানে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি আবারও হয়তো তিনি কোনো মামলায় আমাদেও ফাঁসিয়ে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লাবনী আক্তার শিল্পীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শিল্পী বলেন, তারা যে আমার টাকা লুট করেছে তার প্রমাণ আছে। আমি ঢাকা থেকে টাকা নিয়ে আসার সময় চেক হয়েছে। সেখানকার সিটিটিভি ফুটেজে প্রমাণ আছে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমি ঢাকায় এসে একটি মামলা করেছি। এছাড়া আর কোনো মামলা করেনি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে এখন আমার নামে দোষ দিচ্ছে।
এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরান আলী তুহিন বলেন, বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তদন্ত করছি।