সিরাজুল ইসলাম রতন পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ— বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মোঃ আল জোবায়ের আছিব এর বিরুদ্ধে সরকারি সেচ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ন ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে।
১৬ অক্টোোরব ২০২২ ইং তারিখে এবং বতর্মান বছরের জানুয়ারিতে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ দূর্ণীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগিরা।
জানাগেছে, বর্তমান সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ভর্তূকীর মাধ্যমে স্বল্প খরচে প্রতিটি এলাকায় কৃষকের নিজ জমিতে নির্দিষ্ট পরিমান দূরত্বে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছেন।
এজন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অফিসে নলকূপ স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয় কৃষকদের। আবেদন করার পর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শনের পর তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা সেচ কমিটির নিকএ দাখিল করার নিয়ম রয়েছে।
সেচ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিএডিসি অফিসের পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) এছাড়াও এছাড়াও এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরো ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সেচ কমিটির সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তা আল জোবায়ের আছিব সরেজমিন তদন্ত না করেই এবং সরকারি নিয়ম না মেনেই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে সেচ সংযোগের ছাড়পত্র দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে পলাশবাড়ী উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য স্থানীয় কৃষকেরা আবেদন করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সেচ পলাশবাড়ী অফিসে।
উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর গ্রামের আয়তাল হকের ছেলে শাহিন মিয়া জানান, আমার লাইসেন্স নং অ /৩৫২,মৌজা পূর্ব ফরিদপুর,জে,এল,নং ৯৮,খতিয়ান নং ৭৭০,দাগ নং ২৪৫৯।
২০১৩ সালের ৭ জুলাই মাসে যথানিয়মে সরকারি বরাদ্দের নলকূপ (সেচ) স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার পর আমাকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।
আমি লাইসেন্স পাওয়ার পর অদ্যাবধি ৬/৭/২০২৩ ইং পযর্ন্ত লাইসেন্স নবায়নও করেছি। কিন্তু আমার নলকূপের ২০০ গজ দূরত্বে মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল লতিফকে নিয়মবহিভূতভাবে নতুন লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। অথচ তার বোডিং নেই, বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। আমি গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে এব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,আমার নিয়মিত লাইসেন্স থাকা সত্বেও আমার পাশে আর একজন নিয়মবহিভূতভাবে কিভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।
এদিকে কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের চকবালা গ্রামের রাম লগিনার ছেলে কৃষক শ্রী মন্টু জানান, আমার পাশে তেকানী গ্রামের আবু বক্করের ছেলে সাফিউল ভূয়া খারিজ,খতিয়ান দেখে সেচ সংযোগ গ্রহণ করেছেন। যাহার লাইসেন্স নম্বর অ/১০৮৬,মৌজা, চকবালা,জেএল নং-
৩,খতিয়ান,৪৪২,দাগ নং -২২৩। সে এই লাইসেন্স দিয়ে আমার আবেদনকৃত মৌজা চকবালা,জে,এল নং-৩,খতিয়ান ৪৪১,দাগ নং-১৩৪ এর পাশের ১৩৭ দাগে রাতের অন্ধকারে বোডিং করে সেচ সংযোগ গ্রহণ করে। সাফিউলের বোডিংকৃত দাগ হতে ৭৪০
ফুট দুরে আব্দুল কাদের নামে একটি সেচ পাম্প চলমান। যাহার লাইসেন্স নং অ/৯৪৫,মৌজা তেকানী,জে,এল নং-২,খতিয়ান নং ১২৫/৪১,দাগ নং ৫৪৯,(সাবেক দাগ) ৯৩৮(হাল দাগ)। অভিযোগকারীর অনেক পরে সাফিউল আবেদন করে লাইসেন্স পায়।
তবে বিএডিসি কর্মকর্তা ঘুষ ও দূর্ণীতির কাছে শুধু কৃষক মন্টুই জিম্মি নয়, তাদের মতো আরো অনেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অন্য অভিযোগকারীরা হলেন, পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর গ্রামের মৃত চাঁদ মিয়ার ছেলে বাবলু মিয়া। তিনি জানান,উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা তার লাইসেন্স ভূয়া আখ্যায়িত করে তার লাইসেন্স বাতিলের হুমকি প্রদান করেছেন। তিনি ২৫/১/২০২১ সালে অ/১০৪২ লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে অদ্যাবধি সেচকার্য্য চালিয়ে আসিতেছেন। তার লাইসেন্স নবায়ন ২৭/১২/২৩
ইং পযর্ন্ত। এদিকে বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে মৃত, ইচাহাক আলীর ছেলে রুহুল আমিন এবং আব্দুল জলিলের ছেলে আলমগীর ও লেবু ২০/২৫ বছর থেকে নিয়মিত সেচকার্য্য চালিয়ে আসিতেছেন। কিন্তু যেকোন কারণে তারা লাইসেন্স করেননি। উপজেলা সেচ
কমিটি তাদেরকে লাইসেন্স করার জন্য চিঠি প্রদান করেন। এমনতাবস্থায় তাদের আবেদনের সুযোগ না দিয়ে গোপনে একই জায়গায় প্রতিবেশী রকিব উদ্দিনের ছেলে লালুকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। যা বতর্মান দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আল জোবায়ের আছিব বলেন, সেচ কমিটির মিটিংয়ে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, এব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।