নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ পঁজার ছুটির চতুর্থ ও শেষ দিনেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল লক্ষনীয়। দুর্গাপূজার চার দিনের ছুটি ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক পর্যটকদের আগমন ঘটে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নানা বয়সী হাজার হাজার পর্যটকরা ভীড় জমায় সমুদ্র সৈকতে। এমন ভীড়কে পুঁজি করে স্বরূপে ফিরে আসে কুয়াকাটা। কর্ম ব্যস্তার পাশাপাশি প্রান চাঞ্চ্যতা ফিরে এসেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে গত চার দিনে প্রায় শত কোটি টাকার কেনাবেচা হয়েছে এমনটাই দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ধারণ ক্ষমতার বেশি পর্যটক দর্শনার্থীদের আগমন ঘটায় রুম সংকটে পরে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবার অনেকেই কুয়াকাটার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত আবাসিক হোটেলে গিয়ে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে। আবার অনেকেই কাঙ্ক্ষিত রুম না পেয়ে ফিরে গেছে। আগাম বুকিং দিয়ে না আসায় এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, বালিয়াড়িতে পিরামিড তৈরি, ওয়াটার বাইকে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো সহ উন্মাদনায় মেতে ওঠে। কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধ, রাখাইন তাত পল্লী, রাখাইনদের জীবন দর্শন, সুন্দর বনের পুর্বাংশ ফাতরার বন সহ কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো অবলোকন করেন।
সকালে সূর্যোদয় বিকেলে সূর্যাস্ত দেখে উচ্ছ্বসিত পর্যটকরা। রাতে সৈকতে ফিস ফ্রাই খেতে ভীড় পরে যায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভুমি সমুদ্র কন্যা কুয়াকাটায় অবকাশ যাপনে ছুটে আসা ভ্রমন প্রিয় মানুষেরা কুয়াকাটার সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হলেও অনুন্নত সড়ক ও সৈকতের অব্যবস্থাপনা দেখে হতাশ হয়েছে।
আগত দর্শনার্থীরা জানান, আমাদের দেশের সর্ব দক্ষিণে এমন একটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে তা এখানে না আসলে অনেক কিছু মিস করতাম।
সমুদ্রের ঢেউ, ঢেউয়ের গর্জন সবকিছু মিলিয়ে এখানকার সৌন্দর্য সকলকে আকর্ষণ করবে। বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি একটু নজর দিলে এখানে বারো মাস পর্যটক দর্শনার্থীদের ভীড় থাকবে বলে তাদের বিশ্বাস রয়েছে।
বর্ষা মৌসুম সহ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে কয়েকমাস পর্যটক শূন্য কুয়াকাটা এবার পূজার ছুটিকে ঘিরে লাখো পর্যটকের ঢল নামে। এতে পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ফিরে এসেছে প্রান চাঞ্চ্যলতা। অচিরেই সুদিনের প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যসায়ীদের।
পর্যটকরা কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুশি।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক মিসেস আনিসা রহমান দম্পতি জানান, এর আগে কুয়াকাটা ভ্রমণে এসে সৈকতে নানা অব্যবস্থাপনা দেখেছি। এবার অনেক পরিবর্তন দেখলাম। সমুদ্রের বিশালতায় আমাদের বার-বার আকৃষ্ট করে কুয়াকাটা ভ্রমনে। সমুদ্রকণ্যা যে বলে আসলেই তা অবলোকন করা যায়। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বেশ তৎপর দেখেছি। আমাদের কাছে কুয়াকাটা একটি নিরাপদ পর্যটন নগরী মনে হচ্ছে।
টানা ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মনসুর আলম জানান, কুয়াকাটা আসলেই অন্যতম একটি ভ্রমণ স্পষ্ট। আমরা সময় নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। অসাধারণ আনন্দ বিনোদন সময় পার করলাম। তবে কুয়াকাটা ভ্রমনের জন্য সময় নিয়ে না আসলে এর আসল রূপ-লাবণ্য উপভোগ করা যায়না। বিশেষ করে এখানকার স্থানীয় লোকজনের আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
পর্যটক মো. আলমগীর নেওয়াজ বলেন, কুয়াকাটা আগামীর সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র। আমাদের দেশের এত সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র পর্যটন শিল্প এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা রাখছে। যারাই বিদেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন তাদেরকে আহবান জানাবো যাতে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেন। এতে করে আমাদের দেশ অর্থনীতিতে আরো এগিয়ে যাবে। তবে কুয়াকাটা আসতে কলাপাড়া থেকে মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে পর্যটক সাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণে আসতে পারবে।
আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব জানান, পুজোর ছুটিতে শতভাগ বুকিং ছিল আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলো। কোন প্রকার অভিযোগ অনুযোগ ছিল না পর্যটকদের। আমরা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পর্যটক সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ আনছার উদ্দিন জানান, পর্যটক সেবা নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। যে কোন অপৃতিকর ঘটনা এড়াতে ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশও কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিষ্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ফুলেল শুভেচছা জানানো হয়েছে।