স্টাফ রিপোর্টার, সৈকত মন্ডল
বাগেরহাটের ফকিরহাটে সরকারী গাছ কাটানিয়ে চোর পুলিশ খেলছে কর্তাব্যক্তিরা । ৪৫ দিনেও ফকিরহাটের গাছের সুরহা হয়নি । একজন আর একজনের উপর দোস চাপাতে শুরু করেছে।
ফকিরহাটে প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তার পাশের মূল্যবান ৬ টি সরকারী গাছ দিনের আলোতে নিজের মনে করে কেটে নিয়েছে গাছ খেকোরা। এনিয়ে নানা কানকানি শুরু হয়েছে উপজেলা ব্যাপী । উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। আর সড়ক বিভাগ বলছে ফকিরহাট উপজেলা থেকে এধরনের কোন চিঠি আমরা পাইনি, চিঠি পেলে পদক্ষেপ নিব।
গত ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে ফকিরহাট দিয়াবাড়ী রোডের জোড়া কবর ব্রাক অফিসের সামনের রাস্তার পাশে থেকে ৬ টি সরকারী মূল্যবান গাছ কেটে নিয়েছে গাছ খেকোরা। এনিয়ে দফায় দফায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন মিটিং সভা ও কমিটি গঠন করেও কোন সুরুহা হচ্ছে না গাছ কাটার।
বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপন করছে কর্তাব্যক্তিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে কাঠ ব্যাবসায়ী শেখ সাহিদুজ্জামান নাজু নামে এক ব্যক্তি এই গাছ গুলি কেটেছে। এবিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশ পাওয়ার পর উপজেলানির্বাহী অফিসার নড়েচড়ে বসেন ।
তিনি তাৎক্ষনিক উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেন । অথচ গাছ কাটার ৪৫ দিন পার হলেও গাছ উদ্ধারের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এলাকাবাসী বলছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে নাজু গাছ কেটেছে অথচ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিরব ভূমিকা দেখে আমরা হতভাগ হচ্ছি।
এবিষয় গত ৪ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ফকিরহাট দিয়াবাড়ী রোডের জোড়া কবর ব্রাক অফিসের সামনের রাস্তার পাশে থেকে গত ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ৬ টি গাছ কর্তন করার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সে কমিটির রির্পোট হিসাবে গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে
তবে কে বা কারা কেটেছে তার সুনির্দিষ্ট প্রমান পাওয়া যায়নি । যেহেতু গাছটির মালিক সড়ক বিভাগ আমরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওনাকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছি গাছ উদ্ধার ও দোসিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করে মামলা করার জন্য ।
এদিকে ১৯ জানুয়ারী দুপুরে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, গত দেড় মাস আগে ফকিরহাট এলাকায় সড়ক বিভাগের রাস্তার পাশ থেকে ৬ টি গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে যায় এ খবরটি জানার পর আমি ফকিরহাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহদয়কে অবিহিত করি এবং
উনি এটা দেখছেন বা ব্যাবস্থা গ্রহন করছে বলে আমাকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে উনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় এ কমিটি তদন্ত করে রিপোট প্রদান করার কথা এবং এই গাছ উদ্ধার করে যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্নকরার কথা। আমি আজ পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোন রির্পোট বা ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কোন পত্র হাতে পায় নি ।
যার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারিনি। তদন্ত কমিটির রির্পোট হাতে পেলে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য এর আগেও এ এলাকা থেকে একটি সরকারী গাছ এরকম করে কর্তন করা হয়। সেটিও পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জিম্মায় রাখা হয়েছিল আজ পর্যন্ত সে গাছের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস বলেন, ফকিরহাটের বিভিন্ন সড়ক বিশেষ করে সড়ক বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারী গাছ অনিয়ম তান্ত্রিক ভাবে কাটা হচ্ছে । এসব বিষয় উপজেলা পরিষদ জ্ঞাত নই আমাকে জানানো হয়নি। তবে অনিয়মতান্ত্রিক গাছ কাটা হচ্ছে এটা প্রশাসনিক কোন বিষয় নয় এটা সড়ক বিভাগের যারা এটা নিয়ন্ত্রন করে তাদের জবাব দিহিতা করতে হবে।
আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই ফকিরহাটে বেশ কিছুদিন যাবত অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে অসচ্ছ ভাবে রাস্তার গাছগুলি লোপাট হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া উচিত, কারা এটা করেছে তাদের দৃষ্টান্ত মুলক সাস্তি হওয়া উচিত। এর সাথে প্রশাসনের লোক, সড়ক বিভাগের লোক আর ঐ সব অসাধু ব্যাবসায়ী হোক যারা রাতের অন্ধকারে প্রশাসন বা সড়ক বিভাগের সাথে যোগ শাযোসে এধরনের কাজ করে থাকে তাদের সাস্তির আওতায় আনা উচিত।
উল্লেখ্য, গত ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ২০২২তারিখ সরকারী ছুটিরদিন থাকায় ফকিরহাট দিয়াবাড়ী রোডের জোড়া কবর ব্রাক অফিসের সামনের রাস্তার পাশে থেকে ৬ টি সরকারী মূল্যবান গাছ কেটে নিয়েছে গাছ খেকোরা। স্থানিয় দোকানীরা জানান, উৎকুল এলাকার বেল্লাল নামে এক লেবার সর্দার ১০/১৫ জন লেবার নিয়ে এই গাছ গুলি কেটেছে।
কার কথায় গাছ কাটছে স্থানীয়রা জানতে চাইলে লেবাররা বলেছে নাজু ভাই টিএনও স্যাারের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটছে এ শুনে স্থানিয়রা ঝিমিয়ে যান। শুক্রবার ও শনিবার সরকারী ছুটি থাকার সুজোগে গাছ খেকোরা শুক্রবার সকাল থেকে গাছ কাটা শুরু করে । শনিবার বিকালের মধ্যে ৪ টি গাছ নিয়ে যায় গাছ খেকোরা।
শনিবার বিকালে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ঘটনা স্থলে গিয়ে গাছ কাটা দেখে সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী কে মুঠোফোনে জানালে রাতে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন পুলিশ দিয়ে দুটি গাছের ৬ পিচ (লক) তার হেফাজতে নিয়ে নেয়। এদিকে বাকী ৪ টি গাছ কোথায় আছে তার খোজ কেউ করেনি বলে জানান এলাকাবাসী। এলাকা বাসী আরো জানান,
দুই দিন দিনের আলোতে ১০/১৫ জন লোক প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে ৬টি গাছ কেটেছে প্রশাসন কিছুই জানেনা ? গাছকাটা শেষ হলে রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ দিয়ে দুটি গাছ হেফাজতে নিয়েছেন। বাকী ৪ টি গাছের সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে কি যেন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। কে যেন কাউকে বাঁচানোর চেষ্ঠা করছে। প্রশাসনের কোন এক অশুভ শক্তির কারনে গাছ খেকোরা বেঁচে যাচ্ছে বারবার।