বিজিবি’র ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত
আলি আহসান রবি
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)’-এর ‘বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে’ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’-এর ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:), মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মহাপরিচালক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ; জনাব বাহারুল আলম, মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকালে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি বিজিবি’র সেই সকল অকুতোভয় সদস্যদের, যাঁরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৮ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি চলতি বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বলেন,গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিজিবি সদস্যরা ছাত্র-জনতার দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তি ও পরিবারবর্গের সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। আহত ছাত্র-জনতাকে নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা ও তাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা প্রদান বিজিবিকে জনমানুষের আস্থা ও ভালবাসার প্রতীকে পরিণত করেছে।
মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সীমান্তরক্ষী এই বাহিনীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে এর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সকলের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন তিনি। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪,৪২৭ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্তের ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমন এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি।” নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সূচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত থাকতে আহ্বান জানান।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদেরকে স্বাগত জানান। মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সৈনিকদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার উপরই বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব নির্ভর করে। তাই সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিপক্ষ বাহিনীর কাছে কোনো অবস্থাতেই পিঠ প্রদর্শন না করার জন্য বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে উদাত্ত আহ্বান জানান। দেশ মাতৃকার এক ইঞ্চি মাটিও যেন হাতছাড়া না হয় বিজিবি সদস্যরা তা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, বিজিবির দেয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। বিজিবি হবে সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।
মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-১৯৩ রিক্রুট (জিডি) মোঃ নাঈম মন্ডল এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে তাদের সফলতার জন্যে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল কর্তৃক মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরিশেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই ২০২৪ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।