
চিফ রিপোর্টার:ঢাকা: শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫;ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন ; ভূমির সঠিক ব্যবহার, সংরক্ষণ, মালিকানা নির্ধারণ এবং ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সঠিক জরিপ অপরিহার্য। আর এই জরিপ কার্য সম্পাদনের মূল ভূমিকা পালন করেন সার্ভেয়ার, যিনি ভূমি সেবার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেন।
আজ(শনিবার) রাজধানীর ভূমি ভবনের সম্মেলনকক্ষে ‘ভূমি মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন ব্যবস্থাপনা বিভাগে নবযোদানকৃত সার্ভেয়ারগণের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৫ এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মোট ২০৫ জন সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ১৯৬ জন যোগদান করেছে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট সার্ভেয়ার’স এসোসিয়েশন।
সার্ভেয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আগামীকাল ২৬ অক্টোবর থেকে ভূমি প্রশাসন সেন্টারে ৬ সপ্তাহের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন; সার্ভেয়ারদের কাজের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসন সহজ হয়। সার্ভেয়ার ভূমি পরিমাপ ও মানচিত্র প্রণয়নের মাধ্যমে ভূমির প্রকৃত অবস্থান ও সীমা নির্ধারণ করেন। তার পরিমাপের ওপর ভিত্তি করেই ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত হয়, যা জমির মালিকানা নির্ধারণে সহায়তা করে। সঠিক পরিমাপ না হলে মালিকানা বিরোধ, দখল সমস্যা ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ভূমি প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সার্ভেয়ারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেককে সর্তক থেকে সততার সাথে কাজ করতে হবে। সবাইমিলে একসাথে কাজ করলে ৭১ ও ২৪ এর প্রত্যাশা পুরণ করা যাবে।
সালেহ আহমেদ বলেন; বর্তমান সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ধারাবাহিকতায় সার্ভেয়ারদের কাজ আরও গতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এসেছে। এই প্রক্রিয়ায় সার্ভেয়ারদের কাজ আরও আধুনিক হয়েছে তারা এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এর ফলে ভূমি জরিপে সময় কম লাগছে, নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনসাধারণ দ্রুত সেবা পাচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এনেছে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। অতীতে সার্ভেয়ারদের কাজ মূলত ছিল হাতে-কলমে জরিপ করা, মানচিত্র অঙ্কন, ও রেকর্ড সংরক্ষণ করা। কিন্তু এখন এই কাজগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। তাই সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সার্ভেয়ারদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন; জনসেবায় সার্ভেয়ারদের সততা, পেশাগত দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ভূমি সম্পর্কিত প্রতিটি কাজের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ ও ভবিষ্যৎ জড়িত। সঠিক পরিমাপ, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সার্ভেয়াররা জনস্বার্থ রক্ষায় অবদান রাখেন। তার একটি ভুল মাপ বা অনৈতিক সিদ্ধান্ত বহু মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জনসেবায় সার্ভেয়ার কেবল একটি পেশা নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার ও সম্পদ সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দক্ষ ও দায়িত্বশীল সার্ভেয়ার সমাজে ন্যায়, স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেন।
তিনি আরো বলেন; ভূমি সংস্কার, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, রাস্তা নির্মাণ, কৃষিজমি সংরক্ষণ সব ক্ষেত্রেই সার্ভেয়ারদের অবদান অপরিসীম। তারা ভূমি সংক্রান্ত সঠিক তথ্য প্রদান করে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে গতিশীল করে তুলেন। ভূমি সেবার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সার্ভেয়ারদের পেশাদারিত্ব ও কর্মদক্ষতার ওপর। সার্ভেয়াররা সঠিকভাবে কাজ করলে ভূমি প্রশাসন হবে জনবান্ধব, দক্ষ ও আধুনিক যা একটি উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী, চেয়ারম্যান (সচিব), ভূমি সংস্কার বোর্ড, ঢাকা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ড. মোঃ মাহমুদ হাসান, চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) ভূমি আপীল বোর্ড; মো: সাইদুর রহমান, মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর; অতিরিক্ত সচিব মো: শরিফুল ইসলাম; মোঃ মাহফুজুর রহমান;মো: এমদাদুল হক চৌধুরীসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামিউল ইসলাম শামীম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো: মিরাজ হোসেন।








