রাঙ্গামাটির ভূয়াছড়ি প্রাইমারি স্কুলে ফুটবল উৎসব: শান্তি–সম্প্রীতি, যুব উন্নয়ন ও মানবিক সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনন্য দৃষ্টান্ত
বিলাল হুসাইন,চিফ রিপোর্টার:“শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন”—এই মূলনীতি ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বহু বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম জনপদগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই সম্প্রতি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার অঞ্চল ভূয়াছড়িতে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী ফুটবল টুর্নামেন্ট, যা পাহাড়ি তরুণদের জীবনে নতুন অনুপ্রেরণা ও আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ভূয়াছড়ি, কালুচোরা, ত্রিপুরাপাড়া, কোজুইতলি পাড়া—এসব এলাকার তরুণদের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা ছিল প্রায় অনুপস্থিত। কিন্তু বাঘাইহাট জোনের উদ্যোগে এবং ভারপ্রাপ্ত জোন কমান্ডার মেজর জিল্লুরের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় এবার সেই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনী আয়োজন করে এই ফুটবল প্রতিযোগিতা পাহাড়ি এলাকার তরুণদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে নতুন গতি এনে দিয়েছে।
ভূয়াছড়ি প্রাইমারি স্কুল মাঠজুড়ে সেদিন দুপুর থেকেই ভিড় জমতে থাকে। শিশু, তরুণ, মা-বোন, প্রবীণ—সবাই মিলে মাঠ পরিণত হয় এক উৎসবমুখর মিলনমেলায়। খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস, দর্শকদের করতালি আর সেনাবাহিনীর সৌহার্দ্যপূর্ণ উপস্থিতি পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
টুর্নামেন্টের পুরো আয়োজন ও তদারকিতে নেতৃত্বে ছিলেন বাঘাইহাট জোনের ভারপ্রাপ্ত জোন কমান্ডার মেজর জিল্লুর। তিনি স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের উৎসাহ দেন এবং খেলাধুলাকে জীবনের ইতিবাচক অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন। তাঁর এই অংশগ্রহণ স্থানীয় মানুষের মনে গভীর আস্থা তৈরি করেছে।
বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেজর জিল্লুর বিজয়ী ও অন্যান্য দলের খেলোয়াড়দের হাতে উপহার,ফুটবল, জার্সিসহ বিভিন্ন খেলাধুলার সামগ্রী তুলে দেন।
স্থানীয়দের মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ তরুণদের ভুল রাস্তা থেকে দূরে রাখছে, বিশেষ করে এমন সময় যখন পাহাড়ের কিছু এলাকায় বিভ্রান্তিমূলক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়। খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হওয়ায় যুব সমাজ যেমন আনন্দ ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে, তেমনি সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতাও জোরদার হচ্ছে।একজন প্রবীণ পাহাড়ি বাসিন্দা আবেগভরে বলেন,
“আগে বাচ্চারা ঘরে বসে থাকত, পাহাড়ে কোনো আয়োজন হতো না। এখন সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তাই দেয় না; আমাদের বাচ্চাদের খেলাধুলা, স্কুল, চিকিৎসা—সব দিকে সাহায্য করছে। এই টুর্নামেন্ট আমাদের গ্রামের জন্য খুব বড় আনন্দ।”
বাঘাইহাট জোনের মেজর জিল্লুর জানান, পাহাড়ি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
ভূয়াছড়ির এই ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রমাণ করেছে—
সেনাবাহিনী শুধু সুরক্ষা দেয় না; তারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার।পাহাড়ের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে—রাষ্ট্র তাদেরকে ভুলে যায়নি, বরং তাদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাশে রয়েছে।











