ভয়েসেস অব রেজিলিয়েন্স: এমপাওয়ারিং বাংলাদেশ মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স” শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
আলী আহসান রবি,নিজস্ব প্রতিবেদক:
০৯ নভেম্বর, ২০২৪
আজ ৯ নভেম্বর ২০২৪ সকাল ১০ টায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘ভয়েসেস অব রেজিলিয়েন্স: এমপাওয়ারিং বাংলাদেশ মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স” শীর্ষক এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ফাউন্ডেশন ফর ল’ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্লাড), সলিডারিটি সেন্টার এবং International Lawyers Assisting Workers (ILAW), যেখানে বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার, তাঁদের সংগ্রাম ও সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই অভিবাসী শ্রমিকরা, যারা প্রতিনিয়ত বিদেশে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তবুও, তাঁদের জীবন যাত্রা বিদেশে নানা ঝুঁকি, কষ্টকর পরিবেশ এবং শোষণের মুখে পড়ে।
২০২৪ সালের ১০ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের আদালত ৫৭ বাংলাদেশি নাগরিককে প্রতিবাদ করার জন্য দীর্ঘ কারাবাসের শাস্তি দেয়। আমরা ইতিমধ্যেই তাদের আইনগত সহায়তা প্রদান করেছি এবং এখন তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, এই নাগরিকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হোক, যাতে তারা পুনরায় সমাজে সম্পৃক্ত হতে পারে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ তাসনিম সিদ্দিকী, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, Refugee and Migratory Movements Research Unit (RMMRU) I
ফ্লাড এর সভাপতি বলেন যে, দেশের বাহিরে অদক্ষ মহিলা শ্রমিকদের পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষন প্রদান এবং তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অতীব জরুরী।
কি-নোট স্পিকার ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি তার বক্তব্যে যেই জুলাই বিপ্লবে আমাদের প্রবাশী ভাই ও বোনদের ভূমিকা এবং দুবাই দুতাবাসের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি দেশে ফেরত পাঠানো প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি ডঃ তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের আমলা তন্ত্র, নীতিনির্ধারক, ও রিব্রুটিং এজেন্সির অসহযোগীতার কারণেই অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও মালয়শিয়া তে সিন্ডিকেট-এর যিনি মূল হোতা তার বিরুদ্ধে এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার জন্য সুশীল সমাজের জোরালো ভূমিকা দাবী করেন তিনি। তিনি আরও তুলে ধরেন যে, দক্ষ অভিভাষণ এর জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে মাত্র ০.০৮% বরাদ্দ করা আছে। এত কম অর্থ দিয়ে যথাযথ ট্রেনিং সম্ভব না এবং কমপক্ষে ১% বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন বলে তিনি দাবী জানান।
মাননীয় প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ৫ আগস্টের পর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আর চলতে দেওয়া হবে না। স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেঅভিবাসীদের সাজা মুক্তি সম্ভব করেছে। এমন অর্জন অভিবাসীদের বার্তা দেয়, বাংলাদেশ সরকার তাদের পাশে আছে।
সেমিনারে সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার লিলি গোমেজ, প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ সেক্ষেত্রে বলেছেন যে ফেরত পাঠানো প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসন করানো অতীব জরুরী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, নারী উন্নয়নে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এজন্য মাইগ্রেন্ট অভিবাসী নারী ওয়ার্কারদের উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে পলিসি গ্রহণ করতে হবে, বিদেশে যাওয়ার সময় হয়রানি থেকে মুক্ত পেতে পুরনো এয়ারপোর্টে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য ব্যবহারের জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, তাহলে নারীদের স্বার্থ রক্ষা হবে।
তিনি বলেন, সরকার শাসনব্যবস্থায় এতদিন ব্যবসায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। সুশীল সমাজে যারা নাগরিকত্ব করে ব্রকারেসি করেছেন তারা সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এটা গণতন্ত্র নয় এটা, অনৈতিক গণতন্ত্র তারা তৈরি করেছিলেন। এটা আর চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের সুরক্ষা বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশকে সমৃদ্ধ করতে নতুন উদ্যমে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্ব এবং প্রাসঙ্গিক নীতিমালা বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইনি সহায়তা, পুনর্বাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাঁদের পরিবারের জন্য একটি উন্নত ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নির্মাণে সরকার এবং সমাজের সকল অংশের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।