মৌসুম শুরু হলেও ভোলায় শীতকালীন শাকসবজির দাম কমছে না
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি ;
ভোলায় শীতের আমেজ শুরু হলেও কমেনি শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। শীতের শুরুতেই যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শাকসবজির দাম। এ জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোতে নতুন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, শিমসহ কিছু শীতের সবজির দাম যেন আকাশছোঁয়া।
এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন নিম্ম আয়ের সাধারণ মানুষ। তারা ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তবে সবজি বিক্রেতা ও প্রশাসনের দাবি, কিছু কিছু সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। শীত আসলে তা আরও কমে আসবে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও তা বেড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিমের হালি সপ্তাহ খানেক আগে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অথচ এসব পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকারে বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না পিঁয়াজ, আলু ও ডিম।
বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। সিমও ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা প্রতিহালি ৫০ টাকা, গাজরের কেজি ১১০-১২০ টাকা, প্রতিপিস লাউ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। প্রতিপিস চালকুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, করলার দাম কিছুটা কমে আসছে। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
কয়েকদিন আগে এর দাম ছিল ১০০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। লেবু প্রতিহালি ২০-২৫ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি ৬০-৭০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে ৪ আঁটি লালশাকের দাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
ভোলা সদর উপজেলার কাঁচাবাজারে এসে অনেক ক্রেতাকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। আব্দুর রহিম নামের এক চাকরীজীবী ক্রেতাকে দেখা গেছে বাজারে এসে দুইটি কাঁচকলা কিনতে। জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কি করমু ভাই। আমাগো বেতন বাড়েনা। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম শুধু বাড়ছেই। বাঁচতে তো হবে।
খাইতে তো হবে। তাই বাধ্য হয়ে দুইটা কাঁচকলা কিনছি। কাঁচকলার হালিও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বাজারে আসা এক গৃহিনী একটি লাউ কিনতে এসে হতাশ হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গৃহিনী বলেন, আমি ৫০ টাকা নিয়ে লাউ কিনতে এসেছি। কিন্তু একটি লাউর দাম চেয়েছে ৯০ টাকা। তাই, লাউ না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন,
বাজারে তরিতরকারির অনেক দাম। আমাদের যেই ইনকাম সেই ইনকাম দিয়া মাছ তো ভাল কথা তরকারিও খাইতে পারিনা। আবদুস সাত্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, সবজির দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে এক হালি কাঁচকলা কিনছি ৩৫ টাকায়। এখন কিনেছি ৫০ টাকায়।
শহরের এ, রব স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোঃ আব্দুল মান্নান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যে এতো বেশি। এসব কিনতে গিয়ে আমাদের আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান হচ্ছে না। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। শুধু বাড়ছেই। এতে করে যেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার।
তবে সবজি বিক্রেতা ও প্রশাসনের দাবি, কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। সবজি বিক্রেতা মো: সোহরাব হোসেন ও সুমন বলেন, শাকসবজির দাম এখন অনেকটা কম। কিছু সবজির দাম না কমলেও অনেক সবজির দাম কমেছে। সামনে শীত বাড়লে শাকসবজির দাম আরও কমবে বলেও দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, বাজারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সভা করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। সামনে শীত বাড়লে শাকসবজির দাম আরও কমবে বলেও মনে করেন ডিসি।