রংপুর মেডিকেলে ৬ মাস ধরে নেই ডায়ালাইসিস চিকিৎসার উপকরণ
মাটি মামুন রংপুর।।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি বিভাগে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই।
এ অবস্থায় বাইরে থেকে সব উপকরণ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। ছয় মাসের বেশি সময় এভাবেই চলছে।
একবার ডায়ালাইসিস করতে তিন হাজার টাকার উপকরণ কিনতে হয়। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।
এদিকে, অর্থের অভাবে অনেকের ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। কারও কারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে গত ১৫ দিনে ১২ জন কিডনি রোগী মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
তবে হাসপাতালের পরিচালক ইউনুছ আলী জানিয়েছেন, এত রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি তার জানা নেই।
কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার যন্ত্র ছাড়া কোনও উপকরণ নেই। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এ নিয়ে বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও কোনও উপকরণ সরবরাহ করেনি।
উপকরণ কিনতে না পেরে সপ্তাহে দুই বারের পরিবর্তে মাসে একবার ডায়ালাইসিস করছেন দরিদ্র রোগীরা।
যারা প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছেন না, তাদের চিকিৎসা চলছে না। এতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে কারও কারও মৃত্যু হচ্ছে বিনা চিকিৎসায়।
ডায়ালাইসিস বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ডায়ালাইসিস সেবা অনেকটা বন্ধ হওয়ার পথে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২য় তলায় অবস্থিত ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে ঘুরে এবং কিডনি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে ১২ জনের মৃত্যু ও অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতির তথ্য জানা গেছে।
পঞ্চগড় থেকে রংপুর মেডিকেলে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে এসেছেন আছমা বেগম। তিনি বলেন, ‘উপকরণ কিনতে না পারায় আমার ডায়ালাইসিস হচ্ছে না।
একই কথা জানালেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা থেকে আসা রহিমা বেগম ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে ডায়ালাইসিস করতে আসা মনোরঞ্জন বর্মন।
তারা জানিয়েছেন, একজন কিডনি রোগী ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সপ্তাহে দুদিন করে ৪৮ বার ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। এটি রোগীদের প্যাকেজ সুবিধা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের দুটো কিডনি বিকল, একমাত্র তাদের সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করানো হয়। আগে সব ধরনের উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হতো।
গত ছয় মাস ধরে প্রত্যেক রোগীকে ডায়ালাইসিসের সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনে আনলে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এসব উপকরণ কিনতে ২৭০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করলে ছয় হাজার টাকা লাগে। সে হিসাবে মাসে আটবার ডায়ালাইসিস করতে ২৪ হাজার টাকা লাগে। একজন রোগীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না তারা।
ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে ডায়ালাইসিস করতে আসা সালমা বেগম বলেন, ‘ডায়ালাইসিস করাতে পানি, রক্ত, ক্যানুলা, সুচ, গজ ও ব্যান্ডেজসহ সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়। সপ্তাহে দুই দিনে খরচ পড়ে প্রায় আট হাজার টাকা। মাসে ৩৬ হাজার টাকা। এভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি এখন নিঃস্ব।
রংপুর সদরের মমিনপুর থেকে মা শাহেরা বেগমের কিনডি ডায়ালাইসিস করতে হাসপাতালে এসেছেন তার ছেলে সফিউল আলম। তিনি জানান, তার মায়ের প্রতিবার ডায়ালাইসিস করাতে তিন-চার হাজার টাকার উপকরণ কিনতে হয়।
কিন্তু উপকরণ কিনতে না পারায় মাসে আট বারের পরিবর্তে চার বার করাতে হচ্ছে ডায়ালাইসিস।
এতে তার মায়ের অবস্থার অবনতি ঘটছে।
একই সমস্যার কথা বললেন নীলফামারী থেকে আসা মমতাজ আলী ও দিনাজপুরের হিলি থেকে আসা মোকতার হোসেন। মমতাজ আলী বলেন, ‘ইতিমধ্যে শেষ সম্বল একটি করে গরু বিক্রি করে উপকরণ কিনে ডায়ালাইসিস করিয়েছি। এরপর এত টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমার।
ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের নার্স মো. রানা বলেন, এখানে ২৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। সবগুলো সচল কিন্তু উপকরণ সরবরাহ না থাকায় অনেকের পক্ষে ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে রোগীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন রোগী নেই। যারা আসছেন তারা বাইরে থেকে সব উপকরণ কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ ম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নেই।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সমাধান হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে উপকরণ দিচ্ছে না। এ জন্য রোগীদের সেবা দিতে পারছি না আমরা।