রাজশাহীতে বিচারাধীন জমি ফের দখলচেষ্টায় বাড়িঘর ভাংচুর
সোহেল রানা,রাজশাহী:
রাজশাহী নগরীর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সামনে মালিকানা নিয়ে বিচারাধীন একটি জমি দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি উঠেছে মিজানুর রহমান কাজীর বিরুদ্ধে। তিনি আল আকসা ডেভেলপারস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা ১২টায় আল আকসা ডেভেলপারস লিমিটেডের কিছু লোকজন জোরপূর্বক হামলা ও ভাংচুর করে। ঘরে থাকা চেয়ার, টেবিল, টিন ও প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ইনসান আলী।
আল আকসার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কাজী রাজপাড়া থানাধীন সিপাইপাড়া এলাকার সালিউর রহমানের ছেলে।
তথ্যমতে, এর আগে ওই জমি কয়েকবার দখলের চেষ্টা করলে রাজশাহী মহানগর কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন ইনসান আলী ও তাঁর পরিবার।ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, ইনসান আলীদের জমি দখলের চেষ্টা করার সময় জমির মালিক পক্ষ ও স্থানীয়রা বাঁধা দিলে দখল চেষ্টাকারীরা হুমকি প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ কারী ইনসান আলী জানান, ওয়ারিশান সূত্রে জায়গার অংশীদার আমরা। কিন্তু, আল আকসার মালিক মিজানুর রহমান সহ কিছু ব্যক্তি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন। মামলা চলমানরত অবস্থায় আমাদের সম্পত্তিতে তারা গুন্ডাবাহিনী পাঠিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি আল আকসার মালিকের হুকুমে বাড়ি ভাঙার কারণে রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করেছেন। গত বুধবার (১৯ জুলাই) রাজপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি দাবি করেন, এটি তাঁদের পারিবারিক উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমি। এর মালিক ছিলেন সি এস রেকর্ডীয় প্রজা অধৃনামৃত জনৈক গুমানি খলিফা সি এস খতিয়ান ৩৭৭দাগ নং ১৫০,১৫৭১৫৮,১৬২,১৫৬,,১৬১,১৬৫, ১৫৯১৬০,দাগে জমির পরিমান.৮১ একর সম্পত্তির মালিক। তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ্য উন্মুক্ত ভাবে ভোগ দখল করেছেন গুমানি খলিফা। গুমানি খলিফার মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে গফুর খলিফা ওয়ারিশ হিসেবে তফসিল বর্ণিত ১.২৭ একর পরিমাণ ওই সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়ে সুখে শান্তিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভোগ দখল করতে থাকেন। গুমানি খলিফা মৃত্যুবরণ করলে তাঁর তিন পুত্র বজলার শেখ, কালু শেখ ও ইউনুস শেখ। তিন ভাই পিতার মৃত্যুর পর শান্তিপূর্ণ ভাবে দখল করতে থাকেন। এই মালিকদের মধ্যে ইউনুস শেখ মৃত্যুবরণ করলে , তাঁর ২ স্ত্রী অধৃনামৃত আসরাফুন নেসা ও হালিমা বেওয়া জমি ভোগ করেন।
ইনছান আলীরা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গুন্ডা বাহিনীর দাপটে আমাদের সম্পদ জাল দলিলের মাধ্যমে হয়রানি করে দখল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজশাহী যুগ্ম জেলা জজ এক আদালতে মামলার নাম্বার ২০ /২০২২ বাটোয়ারা মামলা চলমান রয়েছে। মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও বিবাদী মোঃ মানিক,মোঃ আফজাল, মোঃ হাবিব, মোঃ কবির, ফিরোজ, পান্না, আঃ কাদের, মোঃ উজ্জল কবির, টি আই এস কুদরতি খোদা, মোঃ সজল যোগসাজোসে তারা সহ গুন্ডাবাহিনী দিয়ে নেককারজনক কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
ইনশান আলীর অভিযোগ, রেকর্ড ভুল হবার কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামীয় দলিল মূলে সম্পত্তির দাবি করছেন যা কোনভাবেই ওয়ারিশদের সাথে সম্পৃক্ততা নেই। বিবাদীরা এই ভুল রেকর্ডীয় দলিলের সৃষ্টি করে জায়গাটির মালিকানা দাবি করেন। এই রেকর্ডীয় সংশোধনের জন্য এবং জমি ফিরে পেতে ২০২২ সালে তিনি মামলা করেন। মামলাটি এখন চলমান রয়েছে। ইনসান আলী আরো জানান এ সকল কাজের সাথে ইন্ধনদাতা প্রভাবশালী আল আকসার মালিক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কাজী।
ইনসান আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দুপুর দুইটার দিকে পুলিশ যান ঘটনাস্থলে। যারা জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিলেন বা বাড়ি ভাংচুর করেছেন তাঁদেরকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে , তারা বাঁশ এবং টিনের ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ভ্যান আটকে রাখা হয়েছে।
এসম্পর্কে আল আকসা’র স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান কাজী বলেন, এটা বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের জমি বলেই জানি। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জায়গা খালি করা হচ্ছে। রাজশাহীর উন্নয়নের লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ বা প্রতিষ্ঠান করা হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কর্মীরা গেলে তাঁরা বাঁধা প্রদান করেন। আমার লোকজন ফিরে আসে।
রাজপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান ইনসান আলী বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সেই সাথে কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে বিষয়টা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।