প্রতিটি পাহাড়ের অলিগলিতে বেজে উঠে উঠেছে “ছংরাহসি ওয়াগ্যেয়েলা রাথা পোঃয়ে লাহঃগেমে” এই প্রবারণা উৎসবের মধুর কণ্ঠে সুর। যার অর্থ হলো- প্রবারণা পূর্ণিমা শুরু হলো চলো যায় রথযাত্রা মেলায় এমনটি দেখা গেছে রাঙামাটিতে।
রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ের শুরু হয়েছে টানা দুই দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে প্রত্যেকটি বৌদ্ধ বিহারে কানায় কানায় ছিল পরিপূর্ণ । নিজেদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী নতুন ডিজাইনে পোশাকে (থামি,লুঙ্গী) দেখা গেছে ছোট থেকে সকল বয়সের মানুষ। এই দুইদিন ব্যপী অনুষ্ঠানকে ঘিরে কমতি রাখেনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাপ্তাই ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার এবং জয় মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার,রাইখালী, ওয়াগ্গার নোয়াপাড়া, কুকিমারা, শিলছড়ি, বারঘোনিয়া, মিতিংগ্যাছড়িসহ । বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে বিহারেগুলো ছিল মুখরিত। উৎসবকে ঘিরে প্রত্যেক বিহারে সাজসজ্জার বর্ণিল আয়োজন।
সকাল থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মালম্বীরা বিহারে সমবেত হয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণসহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় ধর্মদেশনা প্রদান করেন ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে এরপরই বিহারে বিহারে উপাসক-উপাসিকা ও ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে দান করা হয় ছোয়াইং (আহার),ফলমুল ও নগদ অর্থ । আবার অনেকেই নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি পোশাকে নর-নারীসহ সকল বয়সের ধর্মাবলম্বীরা আনন্দের মেতে উঠতে দেখা গেছে। কেউ বা এক বিহার থেকে আরেকটি বিহারের ছুটছেন ছোয়াইং (আহার) দান করতে
ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের ছোয়াইং (আহার) দান করতে আসা উয়োমা মারমা বলেন, সকালে তারা বিহারে ছোয়াইং দান করেছেন। সন্ধায় মোমবাতি ও হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন শেষে পিঠা উৎসবের মেতে উঠবেন।আরেকজন চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক ক্যউচিং মারমা বলেন, আমরা এই দিনটি জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। সন্ধায় চুলামনি উদ্দেশ্যে আকাশে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ফানুষ উড়ানো হবে। শেষদিনে রথযাত্রা সময় খুব আনন্দ করব !
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, প্রতিবছর দুইদিন ব্যাপী উৎসবের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা তৈরীর উৎসব, ফানুস বাতি উড়ানো ও হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। তাছাড়া এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বাঁশের আদলে তৈরী একটি রথ । সন্ধায় পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণের পর বিহার গুলোতে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শুরু হবে।
এরপর পাড়ায় কিংবা মহল্লার অলিতে গলিতে পিঠা বানানোর উৎসবে মেতে উঠবেন মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ। ভোরের সেসব পিঠা বিহারে বিহারের দান করানো হবে। সন্ধায় ধর্মদেশনা শেষে রথ টেনে কর্ণফুলী নদীতে ডলুইছড়ি পর্যন্ত প্রদক্ষীণ শেষে কর্ণফুলী নদীতে বিসর্জনে দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এই প্রবারণা পূর্ণিমা।