শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাৎ
আলী আহসান রবি
ঢাকা, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউএস অ্যামবাসির Charge d’Affaires, H.E. Ambassador Tracey Ann Jacobson এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেন, বর্তমানে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরের জন্য সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ইউএস অ্যামবাসির প্রতিনিধি দলের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ শতকরা ৫ ভাগ বিদ্যমান অবস্থায় অব্যাহত রাখা হয়েছে। উক্ত সুপারিশকৃত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট আরও শতকরা ৪ ভাগ বৃদ্ধি ১ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে কার্যকর করা হয়, যা জানুয়ারি মাসে প্রদানকৃত বেতনের সাথে দেওয়া হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত) সম্পর্কিত অন্যান্য সুবিধাদিও প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে উপদেষ্টা অবহিত করেন, এক্ষেত্রে আইএলও এর পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে এবং কাজ করা হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, আইএলও এর সাথে শ্রমিক-মালিকপক্ষ সম্পর্কের নীতিমালার সাথে বাংলাদেশের শ্রম সেক্টরের সঙ্গতি রেখে কাজ করছে। এক্ষেত্রে শ্রমিক নেতা, মালিক পক্ষ ও স্টেকহোল্ডারদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর সাথে ইতোমধ্যে আইএলও এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সাথে কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আইএলওকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শমূলক কাউন্সিল এবং আরএমজির সাথে জাতীয় এবং সেক্টরাল পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় সামাজিক সংলাপ প্ল্যাটফর্মগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও জানুয়ারি মাসের শেষে আইএলও এর টেকনিক্যাল এক্সপার্ট টিমের সাথে বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে। সকল পক্ষের মতামত অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন করে যুগপোযোগী করা হবে।
দেশের বন্দরগুলোকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর দিয়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। দেশের প্রায় ২৯টি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সকল বন্দরগুলোকে সমন্বিতভাবে সক্রিয় করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সকল সেক্টরে উপদেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০৩০ সালে এ বন্দরের কার্যক্রম চালু করা হবে। দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় উপদেষ্টা মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বন্দর এবং শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড পরিদর্শনের আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে ইউএস অ্যামবাসির প্রতিনিধিবৃন্দ শ্রম আইন সংশোধনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের কার্যক্রম হিসেবে কলকারখানা পরিদর্শন এবং নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।