সিরাজুল ইসলাম রতন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনটি ব্রিজ নির্মাণে দুর্নীতি ও অসদচারণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে বরখাস্তের সিন্ধান্ত নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কর্মকালীন দুর্নীতি-অসদাচরণের অভিযোগে পিআইও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ২০২১ সালের মে মাসে বিভাগীয় মামলাটি (যার নং ০২/২১) দায়ের করা হয়। পরে ২০২১ সালের জুলাইয়ে রেজাউল করিমকে সাদুল্লাপুর উপজেলায় বদলির আদেশ দেয় অধিদপ্তর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিযুক্ত পিআইও রেজাউল করিমকে পাঠানো শোকজ নোটিশে এসব তথ্য জানা গেছে। ত্রাণ প্রশাসন-১ শাখার সচিব কামরুল হাসান এনডিসি স্বাক্ষরিত (গত ১৮ ডিসেম্বর) শোকজ নোটিশটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।
ওই শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২০১৩-২০১৪, ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের অধীনে গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গফরগাঁও উপজেলায় তিনটি ব্রিজ নির্মিত হয়। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই নির্মিত তিনটি ব্রিজেই ভেঙে পড়ে। ব্রিজ ভাঙার দৃশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
এ নিয়ে সরেজমিন তদন্তে ব্রিজ নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, নিদিষ্ট জিজাইন অনুসারন না করা এবং পিআইও রেজাউল করিমের পর্যবেক্ষণসহ তদারকিতে অবহেলার বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি বিধিমালায় অসদাচরণ এবং দুনীতি পরায়ণতায় অভিযুক্ত রেজাউল করিমকে চাকরি থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে না তার লিখিত জবাব ১০ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়। তিনি জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানিতে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এরপর অধিকতর তদন্তেও উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত এবং গুরুদন্ডের সিদ্ধান্ত হয় বলেও উল্লেখ করা হয় নোটিশে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরআগেও তাকে বরখাস্ত ও শাস্তি প্রদানের জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়।
এদিকে, গফরগাঁও থেকে বদলির পর সাদুল্লাপুর উপজেলায় যোগদান করা পিআইও রেজাউল করিম পলাশবাড়ী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। এরেইমধ্যে তার বিরুদ্ধে টিআর ও কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দে নয়ছয় এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এসব অনিয়মের তদন্ত করতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
যদিও অভিযোগের বিষয়ে জানতে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি পিআইও রেজাউল করিমকে। অফিস সহকারি মো. শ্যাম্পান জানায়, বাবার অসুস্থতার কারণে স্যার ছুটি নিয়ে গত সপ্তাহে বাড়িতে গেছেন। তবে স্যার কবে অফিসে আসবেন তা জানা নেই শ্যাম্পানের। পরে বক্তব্য জানতে মুঠফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত রেজাউল করিমকে।