২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে মেয়েরা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে এ আন্দোলন করল- তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার স্লোগানটা কিন্তু মেয়েরাই প্রথম দিয়েছিল-উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ
বিলাল হুসাইন,চিফ রিপোর্টার:
ঢাকা ,২৪ জানুয়ারি ২০২৫ :
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ইতিহাসকে সুরক্ষিত রাখতে চাই উল্লেখ করে বলেন, একাত্তরে আমাদের মেয়েরা যুদ্ধ করেছিল, তাদেরকে আমাদের ইতিহাস ভুলে যায়, তারা সমাজে মাথা উঁচু করে ফিরে আসতে পারেনা। ২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে মেয়েরা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে এ আন্দোলন করল- তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার স্লোগানটা কিন্তু মেয়েরাই প্রথম দিয়েছিল। সেই রাতের অন্ধকারেই মেয়েরা প্রথম রাস্তায় নেমে এসেছিল। এখন আমরা নিশ্চয়ই মেয়েদেরকে হারিয়ে যেতে দেব না। মেয়েদের স্বীকৃতি আমরা নিশ্চিত করবো। প্রতিটি কষ্টে, প্রতিটি যুদ্ধে, তারা যখন পাশে থাকে পরবর্তীকালে কেন তারা হারিয়ে যাবে। এবার আমরা তাদেরকে হারিয়ে যেতে দেব না।
তিনি আজ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রথম আলো আয়োজিত জুলাই জাগরণ, জুলাই- গণঅভ্যূর্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্বোধক হিসেবে বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটেনের হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সামাদ শরীফ প্রমূখ।
উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলন ২০২৪ আমাদের অন্তরে, আমাদের মনে একটা ভয়ংকর চিত্র রেখে গেছে। আমি ৭১ দেখেছি, আমি ২০২৪দেখেছি। ২০২৪ এ যখন তাকাই, বারবার আমার মন ৭১ এ ফিরে যায়। এই কারণে আমি সান্নিধ্য খুজে পাই একটি যুদ্ধের সাথে আরেকটি যুদ্ধের। সেদিনও এই তরুণ ছেলেদেরকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি। বাড়িতে চিরকুট রেখে গেছে, ডাক পড়েছে যুদ্ধে যাচ্ছি। ২০২৪এ জুলাই আন্দোলনে সেই একই বয়সের ছেলেরা- মেয়েরা বাবা, মার কাছে চিরকুট লিখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ১৫ বছর এদেশের মানুষের উপর যে চরম অন্যায়, খুন, গুম, অত্যাচার হয়েছিল, এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেদিন ছেলেমেয়েরা তারুণ্যের জায়গা থেকে নয় আদর্শের জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা এ আন্দোলনে নেমেছিল। সেদিন এই ছাত্র জনতার আন্দোলনে মানুষের উপর শাসক গোষ্ঠীর সৈন্যদল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নির্বিচারে নির্বিচারে গুলি টিয়ার সেল মেরে শত শত মৃত্যু ঘটিয়েছিল।
তিনি বলেন, সুন্দর সমাজ, সাম্যের সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখতাম। ৭১এ তার জন্য আমরা লড়েছিলাম। ৫০ টি বছর গড়িয়ে গেল সেই ইতিহাস সুরক্ষিত হলো না। কেউ কেউ সেই ইতিহাস দখল করে নিল। যারা প্রকৃত যোদ্ধা তাদেরকে আমরা ভুলে গেলাম, যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিতে পারলাম না। ২০২৪ এর দিকে তাকাই, ভাবি এই ইতিহাসটাও কি কেউ কেড়ে নিবে ? একদিন কি এই ইতিহাসটাও বিকৃত হয়ে যাবে ? এই বাচ্চারা যারা প্রাণ দিল তাদের নামও কি মুছে যাবে ? এবং অদ্ভুত অদ্ভুত নতুন নাম সৃষ্টি হবে ? তিনি উল্লেখ করেন।
প্রথম আলোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এরকম আরো অনেক অনেক উদ্যোগের প্রয়োজন হবে, ইতিহাস থেকে শুধু ক্যামেরাবন্দি নয়, আমাদের চিত্তে আমাকে এঁকে দিতে হবে। এই ইতিহাসকে আর বিকৃত করা যাবে না। যারা যুদ্ধ করেছে তাদেরকে খালিহাতে ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা আমাদের সকলের দায়িত্ব, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব। তাদের পুনর্বাসন করা, তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনা, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া কতখানি যে কঠিন কাজ আপনারা সবাই অনুমান করতে পারেন।
উপদেষ্টা বলেন, এতদিন সমাজে আমরা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, মিথ্যার উপর শাসনব্যবস্থা চালিয়েছি, মিথ্যার ইতিহাস লিখেছি, মিথ্যার নেতৃত্ব দিয়েছি, মিথ্যার উপর গায়ের জোরে মিথ্যা রাজত্ব কায়েম করেছি, এতো অন্যায় এই তরুণ সমাজের বাচ্চারা তারা সেটা ঘৃণা করেছে। নতুন প্রজন্মের সংস্কৃতির বাচ্চারা তারা সত্য বলে, তারা চোখে চোখ রেখে কথা বলে । এ যে জাতি মৃত্যু ভয় করে না, সেই জাতিকে সকলেই ভয় পাবে। এই তরুণ প্রজন্ম আদর্শের জন্য প্রাণ দিতে পারে ২৪ তার উদাহরণ।
উপদেষ্টা আরো বলেন, এবার যদি আমরা সমাজকে তার অতীতের পথ থেকে সরিয়ে আনতে না পারি, মনে রাখতে হবে আগামী প্রজন্ম কিন্তু এভাবে আবার যুদ্ধ করবে।
৭১, ২০২৪ এবং আজকের বাস্তবতায় এই যে উদ্যোগ, এই উদ্যোগকে শত শত উদ্যোগে পরিণত হওয়া দরকার এবং আমাদের ভাবা দরকার আজকের এই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের এক্সিবিশনটাকে আগামী প্রজন্মের জন্য এই ইতিহাস গুলো স্থায়ী এক্সিবিশনে রূপ দিতে হবে যাতে এই ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে থাকে।
উদ্বোধন শেষে অতিথিরা এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। প্রদর্শনী চলবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত । প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।