আজ মহাঅষ্টমী অপেক্ষা থাকে ৩৬৫ দিনের। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অপেক্ষার সে প্রহর যেন শেষ। দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় মাটি দিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে নান্দনিক আলোকসজ্জা ও থিম ভিত্তিক পূজামণ্ডপ তৈরীর মধ্য দিয়ে ষোলোআনা পূর্ণতা পেয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
সারাদেশের মতো পদ্মাপাড়ের নগরীতেও শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজা। দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপে সেজে উঠেছে পুরো রাজশাহী। সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের সর্বত্রই এখন সাজ-সাজ রব।গত শুক্রবার মহাষ্টমীর মধ্য দিয়ে ঢাকে কাঠি পড়েছে এবারের দূর্গা পূজার। গতকাল শনিবার নবপত্রিকা প্রবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মহাসপ্তমীর মূল আনুষ্ঠানিকতা।এদিন দূর্গা দেবীকে আসন-বসন, নৈবেদ্য ও পুষ্পমাল্য প্রদান করে ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেছেন ভক্তরা। আজ রোববার হচ্ছে মহাষ্টমী। অর্থাৎ, শহরের মণ্ডপে-মণ্ডপে চলবে পবিত্র চন্ডী পাঠ, পূজা-অর্চনা ও পুষ্পাঞ্জলি।
এছাড়াও কুমারী মেয়েকে দেবী ও মাতৃরূপে সাজিয়ে কোন-কোন পূজামণ্ডপে হবে কুমারী পূজাও। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় বলে জানিয়েছেন ভক্তরা। দেশ ও জাতির কল্যাণে আজ দেবীর কাছে প্রার্থনা করবেন বলেও জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।এদিকে প্রতিবারের মতো এবারও ভিন্ন আঙ্গিকে পূজা মণ্ডপ তৈরি করেছে শহরের রাণী বাজার এলাকার টাইগার সংঘ। তাদের থিম এবার বিলুপ্তির পথে “পোস্ট অফিস।”
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পূজা মন্ডপের একটু সামনেই নির্মাণ করা হয়েছে মাটির পোস্টমাস্টার। যার বাম হাতে একটি হারিকেন। আর ডান হাতে কাঁধের ওপর একটি লাঠি। সেই লাঠিতে একটি ব্যাগ ঝোলানো এবং সেই ব্যাগের মধ্যে পোস্ট অফিসের বিভিন্ন চিঠিপত্র। এছাড়াও ঠিক তার বাঁ দিকে টানানো হয়েছে একটি বোর্ড । যেখানে প্রদর্শিত করা হচ্ছে পুরনো দিনের বিভিন্ন চিঠিপত্র।এনিয়ে জানতে চাইলে টাইগার সংঘের সভাপতি পার্থ পাল চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতিবারই বিভিন্ন থিমের আদলে পূজামণ্ডপ তৈরি করার চেষ্টা করি। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। এবার আমরা পোস্ট অফিসকে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছি। আশা করছি দর্শনার্থীদের ভালো লাগবে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শহরে এবার ৭৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার মধ্যে হেতেম খাঁ এলাকার হরিজন পল্লীর পূজামণ্ডপ, শেখেরচক এলাকার নেহেরিকা পূজামণ্ডপ, আলু পট্টি এলাকার কসমস, সাগরপাড়া এলাকার উৎসর্গ পূজা মন্দির, আলু পট্টি এলাকার সর্বজয়ী পূজামণ্ডপ, সাগরপাড়া এলাকার ত্রিনয়নী পূজামণ্ডপ, কুমারপাড়া এলাকার সনাতন ধর্ম সংঘ, ফায়ার সার্ভিস ঘোষপাড়া এলাকার মিলন মন্দির, কোর্ট এলাকার হড়গ্রাম মন্দির, ফুদকিপাড়া এলাকার গীতাঞ্জলি পূজামণ্ডপ, ফুদকিপাড়া এলাকার কল্পতরু, কুমারপাড়া এলাকার তারা সংঘ, সাহেব বাজার কালী মাতার মন্দির, গনকপাড়া এলাকার লক্ষী-নারায়ণ মন্দির, মিঁয়াপাড়া এলাকার ধর্মসভা মন্দির, অলকার মোড় এলাকার লাঠিয়াল মন্দির, নিউমার্কেট এলাকার নবরূপ, রানীবাজার এলাকার অ্যারোহেড, সাগরপাড়া এলাকার শিবালয়, বুধপাড়া এলাকার পূজামণ্ডপ, কাজলা ঘোষপাড়া মন্দির, রাজা হাতা কালী মন্দির, আইডি বাগানপাড়া এলাকার পূজামণ্ডপগুলো এবার দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে।
পূজা মন্ডপের সামগ্রিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে কসমস পূজামণ্ডপের সভাপতি আসীম দে বলেন, “এ পর্যন্ত অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি।পদ্মা সার্বজনীন মন্দিরের সভাপতি জ্যোতি কুমার ঘোষ বলেন, “এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের এখানে ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম রয়েছে। আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হবে।”প্রতিশ্রুতি পূজামণ্ডপের সভাপতি নমিত্তা ভট্ট বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ ভালো। সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। সকলেই সম্মিলিতভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।”
দেব মাতা পূজামণ্ডপের সভাপতি তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, “রাজশাহী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। নিরাপত্তা নিয়ে এখানে আমাদের কোন আশঙ্কা নেই। উৎসব মুখর পরিবেশেই আমরা দুর্গাপূজা পালন করছি।”এবারের দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে শহরের সব পূজা মণ্ডপের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।
তিনি বলেন, “যেখানে যেখানে পূজামণ্ডপ রয়েছে, নগর পুলিশ তাদের খোঁজ-খবর রাখছে এবং নিয়মিত মনিটরিং করছে। অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ র্যাব সদস্যরাও কাজ করছেন। আশা করি, সকলের সমন্বিত কার্যক্রম ও সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশেই রাজশাহী মহানগরীতে শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।