স্বাভাবিক হচ্ছে, নিজ বাড়িতেই আছেন গাইবান্ধা-২ এর সাবেক সাংসদ শাহ সারোয়ার কবীর
আব্দুল মুনতাকিন জুয়েল, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর-পরই আত্মগোপনে চলে যান গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে করে অভিভাবকশূণ্য সংকটময় এ দিনগুলোতে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় সময় পার করছেন আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থকেরা।
একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদে গাইবান্ধা জেলার সংসদীয় পাঁচটি আসনের সব কয়েকটিতে আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগের। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের কেউ পালিয়ে গেছেন বিদেশে, কেউবা দেশেই রয়েছেন আত্মগোপনে। তবে, অনেক নেতাকর্মী এলাকাতে দেখা গেলেও আত্মগোপনে রয়েছেন দলের ছোট-বড় অনেক নেতাকর্মী। তবে, পুলিশি কার্যক্রম চালু হওয়ায় ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে জেলার রাজনৈতিক হিংসা পরিস্থিতি।
এদিকে, গাইবান্ধা-২ আসনের এমপি শাহ সরোয়ার কবিরও লাপাত্তা রয়েছেন এবং তিনি শহরে বিএনপি-জামায়াতের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন বলে কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহ সরোয়ার কবীর জানান, আমি শহরের বাড়িতেই ছিলাম এবং আছি। গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষের ভোটে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য।
একারণে পালিয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠেনা। জনগণই আমার শক্তি। সম্প্রতি কয়েকটি পত্র পত্রিকায় আমি বাড়ি ছাড়া এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ সত্য নয় বলে তিনি জানান। এদিকে, জেলার অনেক নেতার বাড়িঘর, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হলেও এমপি সরোয়ারের বসত বাড়ি রয়েছে অক্ষত। সাবেক হুইপ মাহবুব আরা গিনির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে মাহাবুব আরা বেগম গিনিরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মগোপনে চলে গেছেন গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি নাহিদ নিগার। তার মা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিও এখন লাপাত্তা। তিনি এখন কোথায় রয়েছেন জানেন না স্থানীয় নেতারা। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি গাইবান্ধায় কোনো আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা তার নগরীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন।
গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের এমপি আবুল কামাল আজাদও নেতাকর্মীদের রেখে নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাকে মাঠে দেখেননি তার কর্মী-সমর্থকরা। তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে, আগুন দেয়ার আগ পর্যন্ত তাকে এলাকাতে দেখা গেলেও অল্পের জন্য জনরোষ থেকে বেঁচেছেন তিনি বলে জানান স্থানীয়রা। কৌশলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন নেতাকর্মীদের বিপদে রেখে ৪ আগস্ট রোববার সপরিবার উড়াল দেন যুক্তরাষ্ট্রে তার শ্বশুরের কাছে।
আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার নেতাকর্মীরা। তবে, সাঘাটায় দলীয় নেতাকর্মীর বাসাবাড়ি ও দোকানপাঠে হামলা হলেও এমপি রিপনের বাড়িতে কোন ধরণের ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাঘাটা-ফুলছড়ির কয়েকজন নেতা জানান, এমপি রিপন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। একারণে তার বাড়ি ভাঙচুর করার সাহস কারো নেই।
শুধু এমপিরাই নয়; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মীই রয়েছেন আত্মগোপনে। তাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এমপি সারোয়ার ছাড়া অন্য কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি তৃণমূলের কর্মীদের এতদিন যে আস্থা ছিল, তা এখন আর নেই। তাদের কেউই কল্পনা করতে পারেননি শেখ হাসিনা এভাবে দেশত্যাগ করবেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মনোবল ভেঙে গেছে।
একইসঙ্গে শেখ হাসিনা যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন, সেটাও কেউ কোনোদিন কল্পনা করতে পারেননি। তবে অনেকেই জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক একটি দল আওয়ামী লীগ। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহয়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, স্বৈরশাসক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। ভয়ে জনগণ মুখ খুলতে পারেনি। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটাকে আবার স্বাধীন করেছে।
এ বিজয় ধরে রাখতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এদিকে থানায় থানায় পুলিশি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জননিরাপত্তা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হচ্ছে। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার কামাল হোসেন জানান, পুলিশের সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে চলছে। একারণেআইনশ্ঙ্খলাও অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে।
ছবি: সাবেক এমপি শাহ সারোয়ার কবীর, গাইবান্ধা-২