ইলিশের অভয়াশ্রমে ভোলাসহ ৬ জেলায় দুইমাস মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জাটকা সংরক্ষণে দুই মাস দেশের ছয়টি জেলার পাঁচটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ এলাকায় সব
ধরনের জাল ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে অভয়াশ্রম গুলোতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অম্যান্যকারীকে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত
করা হতে পারে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রম হলো—বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলায়। পাঁচটি অভয়াশ্রম এলাকা হচ্ছে চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডারের মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা। ভোলা
জেলার মদনপুর থেকে শুরু করে চর ইলিশা, চর পিয়াল হয়ে মেঘনার শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা। ভোলা জেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম ও তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা।
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা। বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস এসব অভয়াশ্রমে ইলিশসহ
সব ধরনের মাছ আহর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ভোলার মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। মার্চ-এপ্রিল এই দুইমাস মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে, সরকারিভাবে দেওয়া চাল যাতে সঠিকভাবে জেলেরা পায় সেই দাবী অসহায় জেলে পরিবারগুলোর।
এদিকে নিষিদ্ধ সময় সরকারিভাবে দেওয়া জেলেদের মধ্যে চাউল বিতরণে প্রতিবছরই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। ভোলার ইলিশা মাছ ঘাটে মো. ইদ্রিস নামে এক জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব লিখে কি হবে বলেন। আপনারা লিখে যাচ্ছেন, চোরের
চুরিতো বন্ধ হচ্ছে না।’ অপরদিকে দৌলতখানের বটতলার মাছ ঘাটে কথা হয় মো. সফিজলের সঙ্গে। তার মতে জেলেদের চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির লোকেরা চাউল বেশি নিয়ে থাকে। প্রকৃত জেলেরা পায় না। এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা বলেন, ‘প্রকৃত জেলেদের
তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। ঐ তালিকা থেকে যারা জেলে নয়, তাদের বাদ দিয়ে শতভাগ জেলেদের চাউল দিলেই অনিয়ম বন্ধ হবে। যেমন আমার ইউনিয়ন ১২০০ জেলের তালিকা ছিল। যা আমি যাছাই করে ১৩২ জন জেলে পেয়েছি। এখন শতভাগ জেলেকে চাউল দিতে পারছি,আমার ইউনিয়নে কোনো অনিয়ম নেই।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদউল্যাহ বলেন, ‘চাউল বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে জেলেরা সঠিকভাবে চাউল পায় তার জন্য মনিটরিং করার ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। জেলেদের তালিকায় সচ্ছতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
আজ থেকে আগামী দুই মাস নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। আইন অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’