এস, এম মুসতাইন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
মরনের আগে একটি নোট লিখে গেছেন! “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দ্বায়ী নয়! মৃত্যুর পর তার লাশটি যেন ময়না তদন্ত বা কাটাছেড়া না করা হয় এমন অনুরোধ করে গেছেন।
ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তাকে দাফন করা হয় তাও অনুরোধ করেছেন সাকিব। এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের বসুন্দিয়া স্কুল এন্ড কলেজর পাশে ৬ মার্চ সোমবার বিকালে।
আত্মহননকারি গাইদগাছী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের ছেলে নাজমুস সাকিব। সে পদ্মবিলা ফাজিল মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শওকত জাহান সুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, নাজমুস সাকিব পদ্মবিলা ফাজিল মাদ্রাসায় পড়ে। বাড়ির সামনে বসুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল, সাকিবের ছোট বোনকে নিয়ে তার মা স্কুলে যান।
বাবা মাওলানা রফিকুল ইসলাম বাড়ির বাইরে ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, বিকালে সাকিবের মা বাড়িতে এসে ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে দ্রুত ঘরের ভিতর ঢুকে দেখতে পায় সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে তার আদরের সন্তান।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিলে আশপাশের মানুষ ছুটে আসেন। ঝুলন্ত অবস্থায় গলায় ফাঁস দেয়া গামছা কেটে নামানো হয়। সাকিবের পিতা সংবাদ পেয়ে দ্রুত বাড়িতে চলে আসেন।
এ সংবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল শুনার পর ছুটে আসেন। এরই পরপর ইউপি সদস্য শওকত জাহান সুপ্ত, মোঃ ইমরান হোসেন মিলন এবং বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কামরুজ্জামান।
ঘরের ভিতর একটি সুইসাইড নোট লেখা পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিলো নিজের ইচ্ছায় আত্মহত্যার পথ খুজে নিয়েছেন। কেউ দ্বায়ী নয়, এই দুনিয়া আমার কাছে সন্দেহমুলক ভাল লাগে না। না জেনে শুনে কারোর উপর দোষ চাপিয়ে
দেবেন না। এরই মধ্যে পাশেই পাওয়া যায় নাজমুস সাকিবের নিজ হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোট। ওই নোটে লেখা আছে আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়। আমি কারো উপর দোষ দিয়ে আত্মহত্যা করছিনা। “আমার কাছে এই সন্দেহ মূলক দুনিয়া আর ভাল লাগছেনা”।
তাই নিজ ইচ্ছায় আত্মহত্যা করছি। মৃত্যুর আগে আরো বলেছেন কোন কিছু না জেনে কারো উপর সন্দেহ করে তার উপর দোষ চাপিয়ে দেবেন না। পরিবারের লোকজন বলেন, দুই বছর আগেও সাকিব আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো।
তার পিতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, মানসিক সমস্যা ছিল তার ছেলের। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করিয়েছেন। বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কামরুজ্জামান বলেছেন, এই ঘটনার পরে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ময়না তদন্ত ছাড়াই তার
লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বসুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল বলেন, মর্মান্তিক এই মৃত্যুর পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত নাজমুস সাকিবের রূহের মাগফেরাত ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বসুন্দিয়া স্কুল এন্ড কলেজের বায়তুচ্ছালাম জামে মসজিদের সামনে জানাজা শেষে সাকিবের লাশ পারিবারিক কবর স্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের নেতা, বিভিন্ন স্কুল কলেজ, মাদরাসার শিক্ষক, সহপাঠী এবং এলাকার সামাজিক সূধী বৃন্দগন জানাজায় শরিক হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
জানাজার নামাজ পড়ান পায়রা ফাজিল মাদরাসার (অব) পিন্সিপাল হযরত মাওলানা আব্দুল আজিজ।