সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মার্চ মাস, বাঙ্গালীর গৌরবের স্বাধীনতার মাস। এমন দিনে জীবনের শেষ মুহূর্তে একটি ঘর চাই সত্তোরোর্ধ্ব বিধবা রেনু বিবির। পড়ে থাকেন ভাঙা একটি পলিথিনের খুপরি ঘরে।
সম্প্রতি ঝড়ে তার ঘরটি ভেঙে পড়ে। থাকার কোনো পরিবেশ নেই বললেই চলে ঘরের মধ্যে। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে তার আশ্রয় হয় প্রতিবেশীর ঘরে। এই অবস্থায় সরকারের কাছে একটি ঘরের আকুতি জানিয়েছেন তিনি।
রেনু বিবির বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডে। স্বাধীনতার পূর্বে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা অজিউল্লাহ’র সঙ্গে বিয়ে হয় তার। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল।
কিন্তু তারা কেউ এখন আর বেঁচে নেই। নাতি নাতনি থাকলেও তারা খোঁজ নেয় না। তারাও অনেকটাই অস্বচ্ছল। বড় মানিকা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি টিনেরচালা ঘরে রেনু বিবির বসবাস।
ঘরের বেড়ায় মাকড়সার জাল পাতা। চালের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে তাই চালের উপর পলিথিন দিয়ে দেন। ময়লা-আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওই ঘরের বিছানায় অর্ধ আবরণে পড়ে থাকেন বৃদ্ধা রেনু বিবি।
মুক্তি যোদ্ধা ভাতা বিশ হাজার টাকায় সাংসার চালান তিনি। রেনু বিবি বলেন, ‘বিয়ার পর স্বামী সন্তান লইয়্যা সুখেই আছিলাম। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আমার স্বামী মোঃ শহিদ অজিউল্লাহ।
সেখান থেকে আর ফিরে আসেনি তিনি। দুইটি সন্তান ছিল তারাও বেঁচে নেই। এখন তো আমি একলাই বাঁইচ্যা আছি।’ এই অবস্থায় জীবন চালানোর জন্য ভাতার টাকাটাই একমাত্র তার সম্বল।
রেনু বিবির আশ্রয়দাতা লিটন সিকদার বলেন, আমি গরিব হলেও রেনু বিবি সব সময় দেখাশোনা করি। গ্রামের মানুষও তার খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু একটা ঘর না থাকায় তার জীবন যাপন করতে কষ্ট হয়।
কথার রেশ টেনে রেনু বিবি বলেন, আমি স্বামী সন্তান সব হারাইছি। তাই সরকারের কাছে নতুন ঘর চাই। আমি যেই ঘরডায় থাহি, হেই ঘরডা বাতাস আইলেই লইড়্যা উডে। কোনোদিন যে আমার উফরে ভাইঙা পড়ে, আল্লায় জানে।’
মুক্তিযোদ্ধা আহাম্মদ উল্লাহ বলেন, যারা ঘর প্রাপ্য তারা সবাই ঘর পেয়েছে। তিনি হয়তোবা আবেন করার নিয়ম-কানুন বুঝেন নাই, তাই এমনটা হয়েছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মুন্নী ইসলাম বলেন, সরকার সব সময় মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে আছেন, আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখে তার ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।