রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আগুনে পুড়ে ছাই ছয় পরিবারের ৮টি ঘর
মাটি মামুন ,রংপুর:
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় উপজেলার পূর্ব মহিপুর গ্রামের হাবিবুরের বাড়িতে আগ্নিকাণ্ড ঘটে।
এতে আগুনে পুড়ে ছাই হয় গেছে ছয় পরিবারের ৮টি ঘর, একটি গরু এবং ব্যবহৃত কাপড়সহ ঘরে থাকা সব মালামাল।
পুড়ে যাওয়া চাল কুড়ে নিচ্ছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত উম্মেহানি নামের এক নারী।
বাবা কালকা থাকি মুই কী নিয়া স্কুল যাইম, সব বই যে পুড়ি গেইল? বড় আপা যে কয় দিন আগোত নতুন বই কিনি আনিল সেই বইগুলাও তো পুড়ি গেইল, বড় আপা কী নিয়া স্কুল যাইবে। পুড়ে যাওয়া বই হাতে নিয়ে বাবার কাছে এভাবেই বলছিলেন দিনমজুর আদম আলীর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় উপজেলার পূর্ব মহিপুর গ্রামের হাবিবুরের বাড়িতে আগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে আগুনে পুড়ে ছাই হয় গেছে ছয় পরিবারের বাড়ি। এতে ৮টি ঘর, একটি গরু এবং ব্যবহৃত কাপড়সহ ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবার গুলো হলো, ওই গ্রামের মৃত মন্জুম আলীর ছেলে আসরাফুল ইসলাম (৩২), হাবিবুর রহমান (৪০), মাসুদার রহমান (৫৫) ও মন্জুম আলীর স্ত্রী উম্মেহানির বাড়ি ও পাশে থাকা আদম আলী (৩৫) ও তাঁর মা হাজেরা বেগম (৬০)।
মৃত মন্জুম আলীর ছেলেরা রংপুর নগরীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ও তাঁর স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অন্যদিকে আদম আলী ও তাঁর মা মানুষের জমিতে কাজ করে পরিবার চালান।
পুড়ে যাওয়া গরুর পাশে বসে হাউ মাউ করে কাঁদছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আরজীনা বেগম।পুড়ে যাওয়া গরুর পাশে বসে হাউ মাউ করে কাঁদছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আরজীনা বেগম।ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাতে এলাকার লোকজন সবাই তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যান।
গ্রামের নারীরাও তারাবির নামাজের জন্য জামায়তে যান।এমন সময় এক নারী রাস্তা থেকে দেখতে পান হাবিবুর রহমানরে গোয়াল ঘরে আগুন জ্বলছে।পরে ওই নারী চিৎকারে মসজিদ থেকে লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভানোর চেষ্টা করেন।পরে ফায়ার সার্ভিসকে কল দিলে ফয়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া গরুর পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আরজীনা বেগম। এ সময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আজকের পত্রিকার বলেন, ‘খায়া না খায়া অনেক কষ্টকরি বাবুর বাপসহ কিছু টাকা জমা করি একটা গরু কিনছিলুম।
১৫ দিন আগে আরও একটা গরু কেনার জন্য কিস্তির উপর ৪০ হাজার টাকা তুলছি। গরু কেনার জন্য কয়েকটা গরুর হাটও ঘুরছে বাবুর বাপ (স্বামী)। কিন্তু ৪০ হাজার টাকায় ভালো গরু পাওয়া যাচ্ছে না। আমি একটা বীমা অফিসে কিস্তি তোলার কাজ করি।
শনিবার বীমা অফিস বন্ধ থাকায় কিস্তির ৩০ হাজার টাকা ও বই ঘরে ছিল সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এখন এসব কীভাবে শোধ করব? এখন শুধু পরনের কাপড়টুকু ছাড়া যে আর কিছুই নাই। কীভাবে এসব টাকা পরিশোধ করব কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছি না।
পুড়ে যাওয়া বইগুলো তুলে হাত দিয়ে মুছছেন দিনমজুর আদম আলীর তিন মেয়ে মিথী আক্তার, মরিয়ম আক্তার ও মারুফা আক্তার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘরের পাশে দেখা যায় দিনমজুর আদম আলীর তিন মেয়ে মিথী আক্তার, মরিয়ম আক্তার ও মারুফা আক্তার পুড়ে যাওয়া বইগুলো তুলে হাত দিয়ে মুছছেন।
এ সময় দশম শ্রেণি পড়ুয়া মিথী আক্তারের কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, কয়েক দিন আগে তাঁর বাবা দিনমজুর আদম আলী ধার করে ১ হাজার টাকা দিয়ে গাইডবই কিনে এনে দেন। সেই গাইড বইসহ তিন বোনেরেই পড়ার বই, খাতা, কলম সবকিছু পুড়ে গেছে।
তাদের অভাবের সংসার হওয়ায় মিথী আক্তারের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। এ সময় করুন কন্ঠে বাবা আদম আলী বলেন, ‘বাবা মোর সব কিছু শ্যাষ হয়া গেইছে মোর আর কিছু থাকিল না।
এ সময় পুড়ে যাওয়া অন্যান্য পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ইচ্ছা করলেও কিছু বলতে পারছেন না।
সবকিছু হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন তাঁরা।
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ফায়ার স্টেশন মাস্টার মমতাজুল ইসলাম সাংবাদিক দের বলেন
হাবিবুরের গোয়াল ঘরের বিদুৎতের শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।আমরা ধারণা করছি আগুনে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের তালিকা করে জেলা প্রসাশকের কার্যালয় পাঠানো হবে।
আশা করি খুব তাড়াতাড়ি তাদের পূর্ণবাসনের জন্য সেখান থেকে সহায়তা পাবে।