মিঠাপুকুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি
মাটি মামুন রংপুর।।
রংপুরের মিঠাপুকুরে ইউপি-চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ইউপি সদস্যদের প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে হাতাহাতি এবং ইউনিয়ন পরিষদের সভাকক্ষ অবরুদ্ধ করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় প্রতিহিংসামূলক জিডি করার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের গুন্ডা বাহিনীর অব্যাহত হুমকিতে নিরাপত্তায় ভূগছেন তিন সংবাদকর্মী।
ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, বিগত ইউপি-নির্বাচনে ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত প্রার্থী আবু ফরহাদ পুটু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এমপি সমর্থিত ৬ ইউপি সদস্যের সঙ্গে প্রকাশ্যে মনমালিন্য তৈরি করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন মূল্যক কাজসহ ভিজিডি,ভিজিএফ প্রদানে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছিলেন।
পরে ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধা বঞ্চিত ঐ ছয় ইউপি সদস্য স্হানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে মিঠাপুকুর ভবনে দেখা করলে তখন থেকে আবু ফরহাদ পুটু তাদের উপর অজ্ঞাত কারণে আরো চড়াও হন।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ৮ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের নামেমাত্র কাবিখা’র শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে গোপনে টাকা উত্তলনের বিষয়ে ঐ ছয় ইউপি সদস্যের তোপের মুখে পড়ে চেয়ারম্যান এবং প্যানেল চেয়ারম্যান।
ছয়মাস থেকে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে একের পর এক বঞ্চিত করার বিষয়ে জানতে চেয়ে ছয় ইউপি-সদস্যের নেতৃত্ব দানকারী ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে চড়াও হয়ে তাদের বঞ্চিত করার কারন জানতে প্যানেল চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলীর উপর চড়াও হন এবং প্যানেল চেয়ারম্যান তাদের জানায় চেয়ারম্যানকে হঠানোর চেষ্টা করেছিস তাই এটা তোদের শাস্তি। পরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়সহ হট্টগোল এবং চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ভিতরে হাতাহাতি এবং শেষে চেয়ারম্যানকেসহ সভাকক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে।
দিনভর নানান নাটকীয়তা শেষে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় বলদিপুকুর বাজারে রাত আনুমানিক ১২ টার সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমঝোতা এবং সবার উপস্হিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ উভয়ের কাছে প্রকাশ্যে হাত ধরে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়। এবং সুবিধাবঞ্চিত ঐ ছয় ইউপি সদস্যকে ভবিষ্যতে প্রকল্প দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে প্রকল্পের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হাতাহাতি এবং অবরুদ্ধের ঘটনায় বিভিন্ন জনের প্রত্যক্ষ বিবরণ,এমনকি ঘটনাস্থলে সুবিধা বঞ্চিত ইউপি সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে দৈনিক সন্ধাবানী এবং দৈনিক খোলাচোখ পত্রিকার মিঠাপুকুর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রংপুর জেলা শাখার সদস্য এবং মিঠাপুকুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে’ ইউনিয়ন পরিষদে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হাতাহাতি এবং চেয়ারম্যান অবরুদ্ধ এমন একটি পোস্ট দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ (পুটু)।
ঘটনার পরপরই বিশাল বাহিনী নিয়ে সাংবাদিক আশিকুর রহমানকে খুঁজতে থাকেন এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়েরের হুঙ্কার দিয়ে সাংবাদিক আশিকুর রহমানসহ, দৈনিক আমার সংবাদ এবং দৈনিক একাত্তর পোষ্ট” দৈনিক খোলাচোখ পত্রিকার মিঠাপুকুর উপজেলা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রংপুর জেলা শাখার সদস্য এবং মিঠাপুকুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ রুবেল হোসাইন সংগ্রামসহ দৈনিক আজকের বিজনেস বাংলাদেশ এবং দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ শাহআলম মিয়াকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি জিডি করেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের একান্ত কাছের লোক এবং স্হানীয় সাংবাদিক জুয়েল রানা জানান, আমি সব জানি,চেয়ারম্যানকে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। আমি রাতেও বিচারের সময় উপস্থিত। ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম (বাবু) জানান, ৬ মাস থেকে আমি সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
গন্ডগোলের পর বিষয়টি সমাধানে আমি ক্ষমা চেয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান,ভাই ঘটনা সত্য। প্যানেল চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী জানান, ও আমার উপর চড়াও হয়েছিলো কিন্তু পরে বাজারে সার্লিশে ক্ষমা চেয়েছে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার বিষয়ে এবং তার দেহরক্ষী সবুজ কর্তৃক হুমকির বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটুর কাছে জানতে তার নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে একাধিক ইউপি সদস্যের দাবি, প্রকল্পের আট লক্ষ টাকা কিভাবে আত্মসাৎ হলো তার তদন্ত করা দরকার।
এদিকে মিঠাপুকুর থানায় চেয়ারম্যান কর্তৃক একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন সাংবাদিকের নামে থানায় জিডি এবং হুমকি ধামকি দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন,চেয়ারম্যান একটা জিডি করেছে। যেহেতু চেয়ারম্যানের সম্মানের বিষয় এ পোস্টটি ঐ সাংবাদিক কতটা তথ্যের উপর করেছে সেটা আমার জানা নেই। আর যদি এ বিষয়ে কোর্টে মামলা হয় তবে এটা তাদের আইনগত বিষয়।
ঐ তিন সংবাদকর্মীর দাবি, চেয়ারম্যানের পূর্বের বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের জেরে এবং তার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করতে জিডি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সমস্ত সঠিক তথ্য দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।