ওবায়দুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার :
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শরীফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.শাখায়াত হোসেনকে আজ শুক্রবার জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে। গত বুধবার ৩০ নভেম্বর ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে ভুক্তভোগী নিজেই ভাঙ্গা থানায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। এই ঘটনায় নাগরিক মহল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সহ পুলিশ স্কুলে যায়। পরবর্তীতে স্কুল থেকে ঐ শিক্ষক কে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পুলিশ ভ্যানে চলে যায়।
এ ঘটনায় দুপুরের পর থেকে বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা স্কুলের সামনে অবস্থান নেয় ও সড়কপথ অবরোধ করে। তারা প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের সুত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর সকালে শরীফাবাদ স্কুলে পরিক্ষা দিচ্ছিল ওই ছাত্রী। পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ তার খাতাপত্র নিয়ে যান স্বর্বানী সাহা নামের একজন শিক্ষিকা। এ সময় প্রায় ঘন্টাব্যাপী ওই শিক্ষার্থীর খাতাপত্র আটকে রাখা হয়। মেয়েটি কান্নাকাটি করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে তার অনুমতি আনার কথা বলেন ওই শিক্ষিকা। পরে মেয়েটি প্রধান শিক্ষক শাখায়াত হোসেনের কাছে গিয়ে তার পরীক্ষার খাতাপত্র চাইলে শাখায়াত তার রুমে যেতে বলেন মেয়েটিকে। পরে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রধান শিক্ষক শাখায়াত মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে ও তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থান স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। একপর্যায়ে মেয়েটি চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ধরেন প্রধান শিক্ষক শাখায়াত এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য মেয়েটিকে হুমকি দেন। পরে মেয়েটি পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে ঘটনা জানায়।
মেয়েটির বাবা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কাজ করি, ভাত খাই। খুব কষ্ট করে মেয়েটির পড়া-লেহা চালাই। তিনি জানান, তার তিন মেয়ের মধ্যে ভুক্তভোগী মেয়েটিই বড়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য শাখায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহল তার পরিবারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। আমি কোন মীমাংসায় যাবো ন। প্রশাসনের কাজে আহ্বান এর যেন সুষ্ঠ বিচার পাই ।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাখায়াত হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার ঐ মেয়ে টি পরীক্ষা দেওয়ার সময় নকলের অভিযোগে তার খাতা জব্দ করে ঐ হল রুমের শিক্ষক। পরবর্তীতে মেয়ে টি আমার নিকট আসে বিস্তারিত ঘটনা বললে আমি তাকে বাড়ি যেতে বলি এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলি। এর পরে ঐ মেয়ে টি আমার পা জুড়িয়ে ধরে মাপ চাইলে আমি পরীক্ষা হলে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক কে খাতা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু হঠাৎ করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে।
এই বিষয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে জিঞ্জাসা বাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে মামলা রুজূ করা হয়েছে আজ শুক্রবার কোর্টে চালান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিম উদ্দিন বলেন, আমি এবং ভাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সরজমিনে এসেছি। এই ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করতে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, স্কুলের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে। এলাকাবাসী কে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেন।