সমন্বিত চাষে লালমোহনের সেলিম মিয়ার সাফল্য
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি,সত্যকন্ঠ:
মাছ-মুরগি ও সবজির সমন্বিত চাষ করে সফল মো: সেলিম মিয়া। দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহনের ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চতলা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মো: ইমাম হোসেনের ছেলে সেলিম মিয়া।
বর্তমানে তিনি মাছ-মুরগি চাষের পাশাপাশি উক্ত খামারে বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে অনেকটাই সফল। তাক লাগিয়েছেন স্থানীয়দের। বর্তমানে তিনি সুনামের সাথে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সফল ব্যবসায়ীদের একজন।
একই সাথে খামারের পাহাড়ে ও পানির কিনারায় নেট বা জাল টানিয়ে সবজি ও পানিতে সমন্বিত মাছ চাষ করছেন।
সরেজমিনে তার সাথে কথা বলে জানা যায়,
এক সময় তাদের পরিবারে অনেক অভাব অনটন ছিল। এরপর সেই অভাব দূর করার জন্য নিজ উদ্যোগে ২০১৩ সালে মাত্র ১০ হাজার টাকা ক্যাশ নিয়ে স্থানীয় পুকুর মালিকদের কাছ থেকে দু’তিনটি পুকুর লিজ
(লগ্নি) নিয়ে রেনু পোনা ও পাঙ্গাস মাছের (মাছের বাচ্ছার) ব্যবসা শুরু করেন। অনেক চড়াই-উৎরাই লাভ লোকসান পেরিয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে ৪০ শতাংশ জমিতে (ইকবাল মৎস্য খামার) নামক মাছের খামার করে মাছের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পাঁচ
থেকে সাত একর জমি লিজ (লগ্নি) নিয়ে মাছ-মুরগি ও সবজির খামার করেছেন। প্রায় সাত একর জমিতে চারটি করে বিশালাকার মাছ-মুরগির খামার রয়েছে তার। তিনি খামারে কোম্পানি থেকে বয়লার (পল্টি)
মুরগির বাচ্চা এনে পালন করে বড় করে প্রতি মাসে বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেন বলে জানান। খামারগুলো মাচা দিয়ে পানির উপর হওয়ায় মুরগির বিষ্ঠা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষে ও লাভবান হচ্ছেন তিনি বর্তমানে তার খামারে দুই থেকে
তিন হাজার মুরগির বাচ্চা রয়েছেন। আবার পুকুরে পাঁচ থেকে ছয় লাখের অধিক টাকার মাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার খামারে কর্মসংস্থান করছেন দৈনিক পাঁচজন লোক। তার সাফল্যে অনুপ্রানিত করেছে তার প্রতিবেশি একাধিক বেকার যুবককে।
তার পাশের গিয়াস মিয়ার রয়েছে পোল্ট্রি ও মৎস্য নামক খামার। তার ও রয়েছে মুরগি ও মাছের সমন্বিত চাষ। সেলিম মিয়া বলেন, মুরগিগুলোর গন্ধ কম। পর্যায়ক্রমে আমি লেয়ার মুরগির চাষ করবো।
মাছ-মুরগি ও সবজি মিলিয়ে মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে বর্তমানে মাছ-মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে আয় কমে গিয়েছে তার। শ্রমিকের বেতন ও বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগীতা পাই অথবা বিভিন্ন এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাই তাহলে সব কিছু পুশিয়ে আরো লাভবান হতে পারব। খামরের ও পরিধি বৃদ্ধি করবেন বলেও জানান তিনি।
সেলিম আরো বলেন, মুরগির বিষ্ঠার হালকা একটু গন্ধ নাকে আসার আগেই পরিস্কার করা হয়। তার খামারগুলোতে নানা জাতের মাছ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে যা চোখে পরার মতো। বিশেষ করে মাগুর, পাঙ্গাস এবং তেলাপিয়া মাছের উৎপাত আনন্দ বয়ে আনে।
তিনি আরো জানান, তার খামারে এখন পাঁচজন স্থায়ী কর্মী দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। কথা হয় মুরগি ও মাছের খামারের কর্মী শাহাবুদ্দিন ও জান্নাতের সাথে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ মুরগিকে খাবার দিচ্ছেন এবং কেউ কেউ মুরগির পরিচর্যা
করছেন। আবার কেউ সবজি গাছের পরিচর্যা করছেন। তাদের মধ্যে সেলিম মিয়া নিজেই কয়েকজনের সমান কাজ করছেন দৈনন্দিন।
শাহাবুদ্দিন নামে একজন জানিয়েছেন, তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে খামারেই বসবাস করেন। তাদের জন্য খামারী বসবাসযোগ্য ঘর করে দিয়েছেন ওই খানেই।
দিনমজুর জান্নাত জানান, প্রথমে তার অনেক অভাব ছিল তারপর থেকে আস্তে আস্তে তার বেতন ও বাড়তে থাকে। এখন তার পরিবার মোটমুটি স্বচ্ছল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেলিম মিয়ার খামারে বিভিন্ন ধরনের বারোমাসি সবজি চাষ করছেন মাচায় দুলছে ঝাঁকে ঝাঁকে তরকারি। বারোমাসি সবজির
মধ্যে রয়েছে বরবটি, বড় জাতের বেগুন, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, শষা, করল্লা, আঢ়কি, বোম্বাই মরিচ ও পেঁপে প্রভৃতি। তার খামার থেকে প্রতি সপ্তাহে সবজি ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি ক্রয় করে নিয়ে যায় ভোলার দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজারে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও এখান থেকে তাদের সবজির চাহিদা মেটাচ্ছেন।স্থানীয় সচেতনমহল বলেন, যদি সরকারিভাবে মৎস্য ও পশুসম্পদ কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নে সরেজমিনে এসে বা তাদের প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন
তাহলে আমাদের এ অঞ্চলে খামারি দিন দিন বৃদ্ধি পেত। উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেত প্রত্যন্ত অঞ্চল। তারা আরো বলেন, স্থানীয় খামারিরা কোনো পরামর্শ পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
লালমোহন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জয়াধর মূমূর কাছে খামার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই খামার সম্পর্কে আমার কাছে কোনো তথ্য জানা নেই।