নরসিংদীতে দুই নেতা হত্যার ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও তার স্ত্রী সহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা। যুবদল সভাপতি সহ গ্রেপ্তার ৩।
সুমন পাল, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমান সহ দুই ছাত্রদল নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন
সুলতানা সহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় এই
হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি দূর্গে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, বিএনপি নেতা কামাল হোসের ও রাসেল।
মামলার প্রধান আসামী করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন। অন্যান্য আসামীরা হলো খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা,(৩) জেলা ছাত্রদলের
সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ,(৪) বিএনপির নেতা জায়দুল ইসলাম জাহিদ (৫) ইলিয়াস আলী ভূইয়া (৬) আল-আমিন (৭) তানভির (৮) রবিউল ইসলাম রবি, (৯) সোহেল (১০) সাদ্দাম হোসেন ভূইয়া,(১১) মো: ওয়ালিদ হোসেন (১২) রিফাত (১৩) জেলা
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রউফ সরকার রনি, (১৪) সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, (১৫) শামিম সরকার, (১৬) শহর যুবদলের আহবায়ক চৌধুরীু সুমন, (১৭) যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ (১৮) রুবেল হাসান (১৯) চিনিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির
সভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা, (২০) সজিব, (২১) নাজমুল ভূইয়া ,(২২) গোলজার হোসেন,(২৩) শহিদুজ্জামান,(২৪) শাকিল চৌধুরী,(২৫) হানফ সরকার (২৬) আল আমিন ওরফে হাদি (২৭) ইমাম মেম্বার (২৮) বাবুল খন্দকার,(২৯) রাসেল মিয়া,(৩০)
কামাল হোসেন ভূইয়া । এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামী করা হয়েছে।মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনার পর থেকে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর
রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন ভুইয়ার সাথে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্য সচিব রিফাত এর সাথে বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছে। কমিটি ঘোষনার পর
থেকে পদবঞ্চিতরা নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন,সংবাদ সম্মেলন সহ শান্তিপূর্ন ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকাপ
ও ১শত মটর সাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভ মিছিলটি চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি ভেলানগরপার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই পূর্ব
পরিকল্পিত ভাবে খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করেন। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে তাদের উপর হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করিয়া খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করেন। এ ঘটনায় আশ্রাফুল
নামে আরো একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যায়। এর ১দিন পর শুক্রবার সাকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যায়।
নিহত সাদেকুর রহমানের ভাই মামলার বাদি আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলায় আমি কারো নাম দেয়নি। কারন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঘটনা আমার বাড়ির সামনে ঘটেনি। আমি ওসি স্যারের সাথে কথা বলছি। বলেছি আপনার তদন্তে যারা পড়ে তাদের নাম দেন।
বিনা অপরাধে যেন কেউ মামলায় না পড়ে এই কথা বলে আমি এজহারে সই দিয়ে এসেছি। আমি প্রশাসনের উপর দায় ভার ছেড়ে দিয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতারা জানায়, বিএনপির অন্তকোন্দলের কারনে এই জোড়া
হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনার পর পরই জেলা বিএনপির সব্বোর্চ্চ পর্যায়ের গুটি কয়েক নেতার স্বার্থ হাসিলের জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের উসকিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়,বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর,অগ্নি সংযোগ সহ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির
খোকনের উপর হামলা করার জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের লেলিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে রাস্থা ঘাট,কোর্ট কাচারিতে হাজিরা দিতে এলে একাধিক খোকন পন্থিদের উপর হামলা মারপিট করেন পদবঞ্চিতরা। আর এসব করতে পদবঞ্চিত নেতাদের অর্থনৈতিক ও প্রাশাসনিক সহায়তা দিয়েছেন বিএনপির শিল্পপতি এক নেতা। দলে বিবাজন ও
অন্তকোন্দলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এই নেতা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি তার নামে মামলাও হয়নি। কারন তিনি পুলিশের সাথে আতাত করে চলেন।বিএনপি নেতারা আরো জানায়,আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি নেতারা কোন প্রোগ্রাম করতে পারে না। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা
বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন সহ বিএনপি নেতারা মিছিল নিয়ে জেলখানার মোড় অতিক্রম করতে পারে না। কিন্তু ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা অস্ত্র-সস্ত্র সহ শতাধিক মটর সাইকেল বহর নিয়ে শহরের বিক্ষোভ মিছিল করে কি করে?
পদবঞ্চিত নেতারা দলবেধে ককটেল রামদা বন্ধুক নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে এসে হামলা চালায় কি করে? তাদের পুলিশ আটক করেও ছেড়ে দেয়। এর মানে কি? শহরে বিশৃংঙ্খলা করতে পুলিশ এই পদবঞ্চিত নেতাদের পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করেছে। পুলিশ ও বিএনপির সার্থানেশি কিছু নেতার কারনেই আজ ঝড়ে গেলো তাজা দুইটি প্রাণ।