সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায়
খুনিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে
নরসিংদীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
সুমন পাল, সত্যকন্ঠ; নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দুর্বৃত্তদের হামলায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম এর নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার মাষ্টার মাইন্ড সহ সকল আসামিদের গ্রেপ্তার ও
ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে নরসিংদী জেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিক বৃন্দ। আজ ১৭ জুন শনিবার সকাল ১১ টায় নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে নরসিংদী প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, জেলা রিপোর্টাস ক্লাব,
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম নরসিংদী শাখা, রায়পুরা প্রেস ক্লাব সহ জেলার বিভিন্ন সংগঠনের সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করে। এসময় মানববন্ধন থেকে প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে নাদিম হত্যার ঘটনায় সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। নইলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, নরসিংদী প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, সদস্য হলধর দাস, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি সঞ্জিত সাহা, দেশ টিভি ও দেশ রূপান্তর এর জেলা প্রতিনিধি সুমন বর্মণ, নরসিংদী রিপোর্টাস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত
সভাপতি শফিকুল ইসলাম রিপন, সিনিয়র সহসভাপতি শাহাদাৎ হোসেন রাজু, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রমান, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান, সহ-
সভাপতি মাইনউদ্দিন সরকার, চ্যানেল আই টিভির জেলা প্রতিনিধি সুমন রায়, বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি শরীফ ইকবাল রাসেল, রায়পুরা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তফা খান, বাংলানিউজের জেলা প্রতিনিধি সুজন বর্মণ, এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি রাকিবুল ইসলামসহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে দেশ টিভি ও দেশ রূপান্তর এর জেলা প্রতিনিধি সুমন বর্মণ বলেন, দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি থাকায় বার বার সাংবাদিক হত্যার শিকার হচ্ছে। কিন্তু কোন সাংবাদিক হত্যার বিচার ওই পায়নি। এক সাগর-রুনীর হত্যার শুধু আদালতে তারিখের উপর তারিখ পড়তেছে।
জামালপুরের সাহসী সাংবাদিক নাদিম ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে নিউজ করে তাদের রোষানলের শিকার হয়েছিলো। তিনি জীবনের নিরাপত্তার দাবি করেছিলো। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তাকে আজ মরতে হলো। কিন্তু ঘটনার দুই দিন পর ও মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি সঞ্জিত সাহা বলেন, আমরা সবসময় জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে সত্য সবার সামনে তোলে ধরি। অনেক হুমকি- অত্যাচারকে পিছনে ফেলে আমরা কাজ করছি। এই পেশাগত কাজ করতে গিয়ে আমাদের সাংবাদিক ভাইদের জীবন দিতে হচ্ছে। কিন্তু দু:খের বিষয় কোন হত্যারই
বিচার হয়নি। সাংবাদিক নাদিম বার বার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছে কিন্তু প্রশাসন কোন কর্ণপাত করেনি। যার ফলে আজকে আমার ভাইকে মরতে হলো। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সহ সকল আসামীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, আমরা সমাজের ভালো অন্যায় আমাদের লেখার মাধ্যমে তোলে ধরি। আর আজকে সমাজের দর্পণ সাংবাদিকদের ওই রাস্তায় নামতে হয়েছে সহকর্মীর বিচার চেয়ে। প্রশাসন যদি সাংবাদিক হত্যার বিচার কার্য সম্পূর্ণ করতো তাহলে সন্ত্রাসীদের সাহস হতে না কোন সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলার। আমরা ভাই হত্যার বিচার চাচ্ছি।
নরসিংদী প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা কোন সাংবাদিক হত্যার বিচার ওই পাই না। বার বার সাংবাদিকদের মৃত্যুতে আমাদের রাস্তায় দাড়াঁতে হয়। কিন্তু খুনীরা ঠিকই বীরদর্পে সমজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হলে ও তা ঠিকই বের হয়ে যাচ্ছে।
ফলে তারা কোন শাস্তির আওতায় আসছে না। যার ফলে একের পর এক সাংবাদিক হত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা নাদিমের পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি। তারে পাশে দেশের সকল সাংবাদিক সমাজ হচ্চে। খুনীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।
এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
সে সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।