নগরীর ফুটপাত ব্যবসায়ীর দখলে পথচারি বিপাকে
সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
রাজশাহী নগরী দেশের মধ্যে পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন নগরী। যার জন্য এই নগরীকে বলা হয়-গ্রিণ-সিটি, সিল্কসিটি ও হেলদি সিটি। এরআগেও এই নগরীকে বলা হতো শিক্ষানগরী। নগরবাসী ও পথচারিদের জন্য রাস্তা প্রসস্তকরণসহ সবুজায়ন ও আলোকায়ন দৃষ্টিকাড়ে সকলের। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যিনি এই নগরীতে এসেছেন তিনিই মুগ্ধ হয়েছেন। আর এর পুরো কৃতিত্বে রয়েছেন জাতীয় চারনেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজশাহী করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে বিশেষ করে ফুটপাত দখলের কারণে একদিকে নগর দর্শনার্থী ও পথচারিরা চলাচল করতে পারেন না এবং অন্যদিকে নগরের সৌন্দর্য ম্লান হতে বসেছে।
ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটা ও চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে পুটপাতের বিকল্প নেই। কিন্তু এই ফুটপাত কি আসলেই পথচারীদের জন্য? ফুটপাতের বর্তমান চিত্র হচ্ছে, ফুটপাত আছে আবার ফুটপাত নেই।
ফুটপাত দখলে রেখে ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করেই। ফুটপাতে ব্যবসা বা খাবার বিক্রয় তো আছেই। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা যেন বেড়েই চলেছে। ফুটপাত দখলমুক্তে উদাসীন রয়েছে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন।
রাজশাহী মহানগরের বেশির ভাগ ফুটপাত ধরে হাঁটার উপায় নেই। এখানকার রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট-স্থাপনা। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় নেমে চলতে। এরসাথে যত্রতত্র গাড়ি ও রিকশা পার্কিং তো রয়েছেই। নাম না লেখার শর্তে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুলিশ ও নেতাদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা।
নগরের ভদ্রা রেলগেট সড়ক থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর হয়ে কোর্ট, স্বচ্ছ টাওয়ার থেকে সাহেববাজার হয়ে কোর্ট, রানীবাজার থেকে মেডিকেল হলে লক্ষ্মীপুর, লক্ষীপুর থেকে রাজপাড়া থানার বড় একটা অংশই চায়ের দোকান, ফলের, খেলনার, মেট্রেস, জামা-কাপড়ের, গাড়ির ভাঙ্গাড়ী, ভাতের হোটেল, ফার্নিচার পন্য ব্যবসায়ীদের দখলে।
বিশেষ করে রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের রেলগেট বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং এর জন্য ফুটপাত আছে বোঝাই যায় না। এমনকি দিনের বেলা হাঁটা-চলাফেরাতো দুরের কথা গাড়ি চালিয়ে যেতেও হিমশিম খেতে হয়। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্তর থেকে ঘোড়া চত্তর পর্যন্ত রাস্তার এক পাশের প্রায় চার ফুট প্রস্থের যে ফুটপাত আছে, তার বিশাল একটা অংশ নতুন-পুরাতন ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের দখলে। ফার্নিচারের মালামাল ফুটপাতজুড়েই রাখা হয়েছে।
ভদ্রা স্মৃতি অম্লান থেকে স্টেশন পর্যন্ত ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ীদের দখলে। সিএনজি অটোরিকশারও গ্যারেজ রয়েছে। রাস্তা আর ফুটপাথই তাদের ওয়ার্কশপ। সেখানে ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখলের পর রাস্তারও অনেক অংশ দখল করে পাইপ ও যন্ত্রাংশ সাজিয়ে রাখেন। এছাড়াও যত্রছত্র সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাহেন্দ্র ও ব্যাটারিচার্জার অটোরিকশার পার্কিং তো রয়েছেই।
আর ভদ্রা রেলগেটের আশে-পাশে ফুটপাত দেখায় যাচ্ছে না। এখানে ফুটপাত ও রাস্তা দখলে নিয়ে চায়ের দোকান, ফলের দোকান, মুদিখানাসহ অনেক ধরণের ব্যবসা ফেঁদেছে। কারো বোঝার উপায় নেই যে এখানে ফুটপাত আছে। বিশেষ করে সাহেববাজার ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এমনই যানজোট থাকে যে রাস্তা পারাপার রীতিমত লড়াইয়ের শামিল। ব্যবসায়ীদের ভাব দেখে মনে হয়, তারা ফুটপাত ও সংলগ্ন রাস্তা দেখভালকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন বরাদ্দ নিয়েছে।
নগরীর প্রায় মোড়ের ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। গাড়ির ইঞ্জিন, ওয়ার্কশপ, শোরুমের মালামালসহ যে যেভাবে পেরেছে দখলে রেখেছে। যে কারণে নগরীর প্রতিটি ফুটপাত দিয়ে পথচারিদের হাঁটা, চলাফেরা করার কোন সুযোগ নাই। এতে একদিকে গ্রিণ-সিটি, সিল্কসিটি ও হেলদি সিটির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং অন্যদিকে রাস্তা কমে যাওয়ায় যানজোট ও চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ফুটপাত, ড্রেন, রাস্তা এই তিনের সমন্বয়েই পূর্ণাঙ্গ সড়ক ব্যবস্থা। অথচ আমাদের নগরে ফুটপাত উপেক্ষিত। যৎসামান্য ফুটপাত যা আছে তার শতভাগই বেদখলে আছে। কিন্তু রাস্তায় পথচারীর অধিকারই বেশি।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মুলত: নগরীর কোন কিছুতে অসংগতি ও বিছৃঙ্খলা দেখা দিয়ে সিটি করপোরেশন দেখভাল করে থাকে। সিটি করপোরেশন সহযোহিতা চাইলে অবশ্যই সহযোহিতা করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফুদ্দিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। তবে বর্তমানে ম্যাজিট্রেট না থাকায় উচ্ছেদ অভিযান আপাতত: বন্ধ রয়েছে। খুব শীঘ্রই আবারো অভিযান চালানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।