সৈয়দপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেলো ছয়টি অসহায় পরিবার
সৈয়দপুর (নীলফামারী), প্রতিনিধি ;
প্রায় ৫০ বছর ধরে অন্যের জমিতে বসবাস করা আবাস থেকে খালি হাতে উচ্ছেদ হতে যাচ্ছিল ছয়টি পরিবারের প্রায় ১৭০ জন মানুষ। জমির মালিকানা না থাকায় ঘরবাড়ি হারা হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল দরিদ্র লোকগুলো। এমতাবস্থায় অসহায় ওই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান ইউপি চেয়ারম্যান।
তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় জমির মালিকের সাথে সমঝোতায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেন বঞ্চিত পরিবারগুলো। এতে পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতা পাচ্ছেন তারা। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে এমন উদ্যোগে প্রসংশায় ভাসছেন জনদরদী চেয়ারম্যান। এই ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালীপুর ইউনিয়নে।জানা যায়, ওই ইউনিয়নের লক্ষণপুর চরকপাড়া আমজাদের মোড় এলাকায় ৪৫ শতক জমির উপর গড়ে উঠেছে বেশকিছু বসতবাড়ী। এর মধ্যে ৩৮ শতক জায়গায় বসবাস করছেন মৃত এছার প্রামাণিকের তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসহ মনছের আলীর এক ছেলে। তাদের ছেলে মেয়ে সহ প্রায় ১৬ টি পরিবার এখন এই জোতের বাসিন্দা। মোট ১৭০ জন সদস্য ওই পরিবারগুলোর।
কিন্তু এই বসবাসকারীরা কেউ ওই জমির মালিক নয়। মূলতঃ এই সম্পত্তি একজন হিন্দুর। যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ভারতে চলে যান এবং স্বাধীনতা উত্তর ফিরে এসে বিক্রি করেন। জমিটি ১৯৭৪ সালে কিনেন দিনাজপুরের গণেশতলা এলাকার মাহফুজার রহমানের স্ত্রী মাজেদা খাতুন। দীর্ঘদিন ধরে বাস করার দাবীতে জমিটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন বাসিন্দারা এমতাবস্থায় মাজেদা খাতুন তাদের সময় দেন। তারপরও টাকা দিতে ব্যর্থ হলে মানবিক দৃষ্টিতে ১৯৯৪ সালে এছার প্রামাণিককের নামে আমৃত্যু বসবাসের সুযোগ দিয়ে ওসিয়ত করে দেন। এছার প্রামাণিকের মৃত্যুর পর ওই অসিয়তনামা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এছার প্রামাণিকের ছেলে মেয়েরাও জমির দাম দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে জায়গাটি গত ১৯ অক্টোবর বিক্রি করেন মাজেদা খাতুন।
এতে নতুন মালিক সৈয়দপুর শহরের বাঙালীপুর এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের দুই ছেলে মতিউর রহমান ও জামিউল ইসলাম (রাসেল) জায়গা খালি করার নির্দেশ দেয়। একারণে বসতবাড়ী হারানো এবং খালি হাতে উচ্ছেদ হওয়ার মত চরম দূরাবস্থায় পড়ে বসবাসকারীরা। বিষয়টি চেয়ারম্যানের কানে আসলে তিনি উদ্যোগী হয়ে মালিকদ্বয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি টাকা প্রদানে সম্মত হয় এবং তা তিন কিস্তিতে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে পেয়েছে ৬ টি পরিবার। টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন এছার প্রামাণিকের ছেলে নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মেয়ে মফিয়া খাতুন, তহমিনা খাতুন ও মজিদা খাতুন এবং মনছের আলীর ছেলে মোসলেম উদ্দিন। তারা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার সহযোগিতা না করলে আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাতাম আবার খালি হাতে উচ্ছেদ হতে হতো। তাহলে আমরা পথে বসে যেতাম। এমনিতে দিন এনে দিন খাই আমরা। সব হারিয়ে চরম দূর্দশায় পড়তাম। সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন তাঁরা। এখন যে টাকা পাবো তা দিয়ে জমি কিনে নিজস্ব বাড়ি করতে পারবো। চেয়ারম্যানের এই উপকারের কথা আমরা কোনদিন ভুলবোনা।
ওয়ার্ড মেম্বার কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয়ের সহযোগিতায় আমার এলাকার ১৫০ জন মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। তিনি হস্তক্ষেপ না করলে মানুষগুলো সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতো। এমন মানবিক কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। উপকৃতরাসহ সচেতন মহল এজন্য ইউপি চেয়ারম্যানের প্রশংসা করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান সাহাজাদা সরকার বলেন, এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। এতগুলো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে অথচ কোন রকম ক্ষতিপূরণ পাবেনা এটা হতে পারেনা। যদিও আইনগতভাবে তারা জমির মালিকানা না থাকায় জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য। তবে বসতবাড়ীর ক্ষতির টাকা তো পাওয়া তাদের অধিকার। মানবিক ভাবেই এটা দেয়া উচিৎ।
তাই স্বউদ্যোগে বিষয়টি তদারকি করেছি। জমি ক্রেতা দুই ভাই অর্থশালী ও হৃদয়বান হওয়ায় ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছেন। এজন্য তাঁরাও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। নতুবা তাঁরা আইনীভাবেও জমি খালি করে দখল নিতে পারতেন। তা না করে অসহায় লোকগুলোর প্রতি সহমর্মিতা দেখানোয় আমিও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এসময় চেয়ারম্যান আরও বলেন, একটি কুচক্রী মহল ওই দরিদ্র মানুষগুলোকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের কথায় যদি পরিবারগুলো মালিকদ্বয়ের কথায় সম্মত না হয় তাহলে তাদের আমও যাবে ছালাও যাবে। তাই এব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ওই দুষ্ট লোকগুলো অহেতুক প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে নিজেদের হিনস্বার্থ হাসিল করতে। ক্ষতিগ্রস্থদের উপকারের জন্য নয়।